হবিগঞ্জের সাতছড়িতে বিপন্ন প্রাণী উল্লুক
বিশেষ প্রতিনিধি : গাছের মগডাল থেকে হঠাৎ করে কালো বর্ণের একটি প্রাণী লাফ দিয়ে অনেক দূরের আরেকটি গাছে লাফ দিয়ে চলে গেল। কোনো ধরনের সমস্যা হলো না।
সুন্দর এই দৃশ্যটি দেখতে গেলে চলে যেতে হবে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। আর এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রাণীটির নাম উল্লুক। তবে দৃশ্যটি ক্রমশ দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হল এই বনে প্রাণীটি এখন মহাবিপন্নের মধ্যে পড়েছে। আর এই বিপন্নতার পিছনে দায়ী কোনো প্রাণী নয়। মানুষের জন্যই আজ তাদের বসবাসের জায়গা বিনষ্ট হচ্ছে। দেখা দিয়েছে তাদের চরম খাদ্য সংকট।
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এবং রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির বানরের বসবাস।
এর মাঝে সবছেয়ে আকর্ষণীয় হল উল্লুক। এক সময় ওই দুই বনে গেলে উল্লুখের দেখা মিলত। সাধারণত উল্লুখ রাতের বেলা গাছের উচু ডালে ঘুমায়। দিনের বেলা খোলা জাায়গায় তেমন একটা না আসলেও বনের ট্রেইল দিয়ে গভীরে গেলেই চোখে পড়ে দল বেধে ৩/৪টি উল্লুক একত্রে লাফালাফি করছে এক গাছ থেকে অন্য গাছে। সাতছড়িতে এক সময় অনকে উচু এবং পুরনো গাছ ছিল। এগুলোতেই তারা আবাস গড়ত। আর খাদ্য হিসেবে বনের ডুমুর, বটসহ বিভিন্ন ধরনের কাচা ফল গ্রহণ করত। এখন উঁচু গাছও কমে গেছে। পাকা ফলের গাছ নেই বললেই চলে। ফলে উল্লুকের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে গেছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন বনে এক সময় হাজার হাজার উল্লুক ছিল। এখন রয়েছে মাত্র কয়েক শ। হবিগঞ্জের সাতছড়ি এবং রেমা-কালেঙ্গায় এর আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মত। এখন এর দেখা মেলে কালে ভদ্রে।
এরা দিবাচর, রাতে উঁচু ডালে ঘুমায়। ভোরের আগে ওঠে এবং সন্ধ্যার অনেক আগেই দিনের কাজ শেষ করে। এরা খোলা জায়গায় তেমন আসে না। দু থেকে পাঁচটি উল্লুক একত্রে থাকে। সাধারণত থে-উ, হু-উ, হো-কো-উ ইত্যাদি স্বরের একটানা ও যৌগিক স্বরে ডাকে আর এজন্যই এদের নাম উল্লুক।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উল্লুকের উপর পিএইচডি করা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহসান জানান, রেমা-কালেঙ্গা বনে যে কোনো সময় উল্লুক শুন্য হয়ে পড়বে। সাতছড়িতে এখনও কিছু আছে। ব্যাপকভাবে বন ধ্বংসের জন্য এই প্রাণী আজ মহাবিপন্ন। উল্লুক সাধারণত মাটিতে নামে না। বনে খাদ্য ঘাটতি এবং এক গাছ থেকে অন্য গাছের দুরত্ব কমে যাওয়ায় এই প্রাণী যখন নিচে নেমে যায় তখন অনেক আধীবাসী এটিকে শিকার করে ভক্ষণ করে। ফলে প্রাণিটি আজ বিপন্ন। তিনি বলেন, যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। আর যেন বন ধ্বংস করা না হয় সেদিকে আমাদের সবাইকে নজর দিতে হবে।