রবিবার, ১লা জুলাই, ২০১৮ ইং ১৭ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীকে হাতুড়ি পেটা, শাশুড়িকে কোপ, ঝলসেও দিয়েছেন স্বামী

অনলাইন ডেস্ক : নির্যাতনের শিকার আয়েশা (মাঝে), তার মা মমতাজ (বাঁ পাশে) ও নির্যাতনকারী নজরুল (ডান পাশে ইনসেটে)

রাজধানীর পল্লবীতে যৌতুকের দাবিতে আয়েশা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও শরীরে গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, আয়েশাকে বাঁচাতে গিয়ে এলোপাতাড়ি কোপের আঘাতে আহত হয়েছেন তার মা মোসা. মমতাজ বেগমও।

আয়েশার স্বামীর নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাবেক গাড়ি চালক।

যৌতুকের দাবিতে আয়েশাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে, তার মাকে কুপিয়ে ও তাদের গরম পানি ঢেলে, শরীর ঝলসে দিয়েছে তাও নয়, তাদের ঘরে থাকা সব টাকা-কড়ি, স্বর্ণালঙ্কার হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন আহতরা।

গত ১৮ জুন দুপুরে পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশন বাউনিয়াবাদ এলাকার নিজ বাড়িতে এই হামলার শিকার হন আয়েশা ও মমতাজ। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মমতাজ বেগম।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মমতাজ বেগমের ডায়েবেটিসের সমস্যা থাকার কারণে তার শরীরের ক্ষতস্থানগুলোয় পঁচন ধরেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে যৌতুকের ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘটনার বিচার চেয়ে মামলা করেন আয়েশা। কিন্তু তারপর থেকেই বিভিন্ন সময় ভুক্তোভোগীদের পুড়িয়ে মারার হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। এ ব্যাপারে আজ শুক্রবারও মিরপুরের পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আয়েশা।

আরও : ২৫ বছরে যেসব টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়েছে আর্জেন্টিনা

দগ্ধ আয়েশা আক্তার আমাদের সময়কে জানান, ২০০৭ সালে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিছুদিন না যেতেই ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আয়েশার উপর নির্যাতনের খড়্গ নেমে আসে। প্রথম সন্তান হওয়ার পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন তার স্বামী। নির্যাতন থামাতে বিভিন্ন সময় নজরুলের হাতে তার মা ৫ লাখ টাকা তুলে দেন। টাকা পাওয়ার পর কিছুদিন শান্ত থাকলেও নির্যাতন থামাননি নজরুল। দুই সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সব কিছুই সহ্য করে আসছিলেন আয়েশা। কিন্তু নজরুলের সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ১৭ এপ্রিল পল্লবী থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ডির্ভোস দেন নজরুল। এরপর গত ১৮ জুন দুপুর ১২টার দিকে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে বাউনিয়াবাদ এলাকার বাড়িতে এসে তাদের ওপর হামলা চালান নজরুল ও তার সহযোগীরা।

আয়েশা আরও জানান, নজরুল সন্ত্রাসীদের নিয়ে ঘরে ঢুকেই অস্ত্র ঠেঁকিয়ে তাদের মা ও মেয়েকে জিম্মি করে ফেলেন। বেধড়ক পিটুনির একপর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে আয়েশার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন তারা। মাথা, হাত এমনকী গোপনাঙ্গেও লাগাতার হাতুড়ি পেটা করা হয়। অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে চুলা থেকে গরম পানি এনে তারা আয়েশার মুখে ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বৃদ্ধা মমতাজ বেগমকেও চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় নজরুল।

তিনি আরও জানান, তাকে বাঁচাতে এলে নজরুল পাতিলভর্তি গরম পানি তার মায়ের শরীরে ঢেলে দেন। এমনকি তার শরীরেও গরম পানি ঢেলে দেওয়া হয়। তার মুখে ঘুষি মেরে সামনের পাটির তিনটি দাঁতও ভেঙে দেন নজরুল। এ সময় ঘরের আলমারি ভেঙে তারা আয়েশার বিয়ের ১২ ভড়ি স্বর্ণালঙ্কার, নগদ দেড় লাখ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুট করেন নজরুলের অপর সঙ্গীরা।

এ সময় প্রাণ বাঁচাতে তারা ডাক-চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ও টহল পুলিশ এসে নজরুল, রবিউল, উজ্জ্বলসহ ৪ জনকে আটক করে। তাদের সঙ্গে থাকা অপর সন্ত্রাসীরা এ সময় পালিয়ে যান।

পরে পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের মা ও মেয়েকে প্রথমে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে তাদের স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে আয়েশাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তার মা মমতাজ বেগম এখনও চিকিৎসাধীন।

আমাদের সময়কে আয়েশা আক্তার বলেন, “পুলিশ ৪জনকে আটক করলেও অন্য আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। সপ্তাহ ঘুরতেই আটকদের কয়েকজন জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এখন মামলা তুলে নিতে আসামীরা প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আমাদের। বৃহষ্পতিবার রাতেও আমার রাস্তা আটকে হামলায় অংশ নেওয়া ৪জন বলেছেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা তুলে নেওয়া না হলে আমাকে তারা এসিড মারবে; না হলে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারবে।’ একদিকে মায়ের চিকিৎসা, অন্যদিকে আসামিদের হুমকি-ধমকিতে চোখে অন্ধকার দেখছি। ঘর ছেড়ে পালিয়ে থেকেও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছি না।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই আরিফ হোসেন আমাদের সময়কে জানান,মামলার কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নতুন করে জিডির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Print Friendly, PDF & Email