জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ ৬ মাস
অনলাইন ডেস্ক : রাজধানী মহাখালীতে দেশের একমাত্র সরকারি স্যালাইন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে গত ৬ মাসেরও বেশি সময় স্যালাইন ও ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে।
দক্ষ জনবল ও যন্ত্রপাতি থাকলেও স্যালাইন তৈরির অন্যতম উপাদান গ্লুকোজ এনহাইড্রোস, গ্লুকোজ মনোহাইড্রোস এবং স্টপার টিটি ও পিভিসি শিট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক মাস থেকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগ কেনার অনাপত্তি পত্র প্রদান করছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আইভি ফ্লুইড ও ব্যাগ উৎপাদন ইউনিট দু’টি যখন সচল ছিল তখন সেখানে ৯ প্রকারের স্যালাইন (গ্লুকোজ, গ্লুকোজ অ্যাকুয়া, নরমাল, কলেরা, পেরিটনিয়াল ডায়ালাইসিস, ৩ শতাংশ নরমাল, বেবি, হেমোডায়ালাইসিস ফ্লুইড ও হাটর্সম্যান) ও ৪ প্রকারের ব্লাড ব্যাগ সিপিডি (সাইট্রেট ফসফেট ডেক্সট্রোজ), বেবি এবং ট্রান্সফিউশন ও ইনফিউশন সেট উৎপাদন হত।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে প্রশাসনিক শাখা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে আগে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার পিস স্যালাইন ও ২ থেকে ২ হাজার ৫০০ পিস রক্তের ব্যাগ উৎপাদন হত।
উৎপাদিত ওইসব স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগ রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর ও উপজেলা হাসপাতালে সরবরাহ করা হত।
গত ৬ মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন হাসপাতালকে অতিরিক্ত দামে ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগ কিনতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আগের তুলনায় কম সংখ্যক রোগীকে বিনামূল্যে স্যালাইন দেয়া সম্ভব হচ্ছে। অধিকাংশ রোগীকেই পকেটের টাকা খরচ করে বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।
আরও : ২৫ বছরে যেসব টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হয়েছে আর্জেন্টিনা
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, দক্ষ পরিচালকের অভাবে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। গত দেড় বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটিতে কমপক্ষে চারজন পরিচালক বদলি হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার দুই থেকে ৬ মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রাপ্ত পরিচালকরা কেউ অবসরে গিয়েছেন আবার কেউবা পদোন্নতি কিংবা বদলি হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যান। ঘন ঘন পরিচালক বদলির কারণে যথা সময়ে বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় এ দুরবস্থার সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য সেক্টরে কর্মরত দু’জন বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সাদা চোখে দেখলে মনে হবে শুধুমাত্র সময় মতো কাঁচামাল আমদানি না হওয়ায় স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
কিন্তু প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন উল্লেখ করে তারা বলেন, দেশের কয়েকটি প্রভাবশালী বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগ উৎপাদন করে। সরকারি স্যালাইন উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সরবরাহ থাকলে ওই কোম্পানিগুলো হাসপাতাল কিংবা রোগীদের কাছে স্যালাইন বিক্রি অর্থাৎ একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ পায় না। প্রভাবশালী কয়েকটি কোম্পানিকে মনোপলি ব্যবসার সুযোগ করে দিতেই সুকৌশলে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬ মাস যাবত স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ থাকলে আগের মজুদ থাকায় মাত্র কিছুদিন যাবত স্যালাইন সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে স্যালাইন সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিলম্ব ও প্রতিষ্ঠানটিতে ঘন ঘন পরিচালক বদলি হওয়ায় উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, আইভি ফ্লুইড ইউনিটে যেসব স্যালাইন উৎপাদন হয় এর অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে খুবই কম সংখ্যায় ব্যবহৃত হয়। দ্রুত স্যালাইন উৎপাদন শুরু করার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালকের সঙ্গে তিনি আজই কথা বলেছেন।
পরিচালক তাকে জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় স্যালাইন উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন।