শুক্রবার, ২৯শে জুন, ২০১৮ ইং ১৫ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মেসি পৃথিবীর সেরা অধিনায়ক: রোহো

স্পোর্টস ডেস্ক : মুখে স্বীকার করুন আর না করুন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেয়ে বসেছিল তাঁকে। প্রথম ম্যাচে রোনালদো কী অবিশ্বাস্যই না খেললেন। স্পেনের বিপক্ষে একাই হ্যাটট্রিক করে রুখে দিলেন, তুলে নিলেন মহা মূল্যবান ১ পয়েন্ট। লিওনেল মেসি? আইসল্যান্ডের বিপক্ষে করলেন পেনাল্টি মিস! দ্বিতীয় ম্যাচে পতুর্গাল বলতে গেলে একটাই পরিষ্কার সুযোগ পেল। রোনালদোর মাথা আবার পার করল দলকে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে মেসি পাসই পেলেন মোটে দুটি। সব মিলিয়ে ম্যাচে বল ছুঁয়েছেন ৪৭ বার। ক্যারিয়ারে আর কোনো ম্যাচে মেসি এত কম সক্রিয় থাকেননি কখনো।

তখন মেসির একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে বানভাসি হয়েছিল। ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সংগীতের সময় মেসি যেন তখনই চাপে ভেঙে পড়ছেন। রক্তিম মুখের আভা। কপাল টনটন করছে চাপের যন্ত্রণায়। মেসি আঙুল দিয়ে ডলছেন। ৩-০–তে বিধ্বস্ত হয়ে বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া মেসি এরপর একের পর এক হতাশামাখা খবরের মধ্য দিয়ে এলেন। আর্জেন্টিনায় নাকি বিদ্রোহ চলছে। কেউ সাম্পাওলির অধীনে খেলবে না। নাইজেরিয়া ম্যাচের আগে দলের ভার নিচ্ছেন বুরুচাগা!

এর মধ্যে জন্মদিনটা মেসির জন্য স্বস্তির হয়ে এল। আর এল নাইজেরিয়ার জয়। বেঁচে উঠল নিভু নিভু আশা। সেই আশার ভেলায় উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিতে আজ নেমেছিলেন মেসি। ছোট্ট ডিঙি নৌকার হাল ধরতে হয়েছিল তাঁকেই। এ এমন এক ম্যাচ, জানতেন, দলকে নির্ভার রাখতে এগিয়ে নিতে হবে। গোল করতেই হবে। চাপের মধ্যে আর্জেন্টিনা ভেঙে পড়বে আবার। মেসি একটাই সুযোগ পেলেন। কঠিনতম এক সুযোগ। প্রায় মাঝমাঠের একটু সামনে থেকে হাওয়ায় ভেবে আসা লং বল। এভার বানেগা বুঝতে পেরেছিলেন, বক্সের মাথায় মেসি আছেন। খুব বিরল সময়ের জন্য, যেখানে মেসির পাশে চারজন নেই।

নাইজেরিয়ার হিসাব ছিল, বল আরেকটু ওপরে তুললে পরেই না মেসির কাছে আসবে পাস। তখন দেখা যাবে। বানেগার বলটা নাইজেরিয়ান প্রহরীদের দর্শক বানিয়ে চলে এল মেসির কাছে। মেসি বিশ্বস্ত বাঁ পায়ের ঊরুতে হালকা ছোঁয়ায় বলটাকে আগে শান্ত করলেন। পড়ন্ত বলে বুটের আলতো টোকায় সামনে বাড়ালেন। ছুটকে থাকা বলে নিলেন শট। কী এক অবিশ্বাস্য গোল। এরপর চলে গেলেন একা সীমারেখার কাছে। গোলের পর যা করেন, স্বর্গের দিকে তাকালেন। প্রয়াত দাদি শুধু নয়, এবার যেন তা সৃষ্টিকর্তার দিকেও তাকানো। দুই হাত ওপরে, তর্জনী উঁচিয়ে।

শেষ পর্যন্ত ম্যাচের নায়ক অবশ্যই মেসি নন। মার্কোস রোহো যোগ্যতম হিসেবেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের দাবিদার। ওই মুহূর্তে ওই গোল না করলে এখন আর্জেন্টিনার এলিজি লিখতে হতো সারা বিশ্বকে। হয়তো লিওনেল মেসির আন্তর্জাতিক অধ্যায়েরও সমাপ্তি। রোহো মেসিকে আরেকটি সুযোগ দিলেন। হবেও না জেনে আরও একটু বুক বাঁধার সাহস দিলেন সমর্থকদের। কে জানে, হতেও তো পারে!

এমন ম্যাচের পরও রোহো নিজে কিন্তু কৃতিত্ব নিলেন না। বললেন, মেসিই আজ তাঁদের ‘আর্জেন্টিনার মতো’ খেলতে অনুপ্রাণিত করেছে। মাঝবিরতি শেষে মাঠে নামার আগে টানেলে সবাইকে ডেকে নিয়ে মেসি কী যেন বললেন। মেসি এমন উজ্জীবনা বাণী দিচ্ছেন সতীর্থদের, আগে কে কবে দেখেছে! রোহো জানালেন, কী মন্ত্র তখন পড়ে দিয়েছিলেন মেসি, ‘মেসি এসে বলল, আমরা সবাই যেন শান্ত থাকি। কেন যেন উদ্বেগে না ভুগি। আমরা সত্যি নার্ভাস ছিলাম। ওর ওই কথাগুলো খুব কাজে এসেছে। বিশেষ করে আমার জন্য। আমার আত্মবিশ্বাস এক পলকে বেড়ে গিয়েছিল।’

রোহো নিজে হারিয়ে যেতে বসেছিলেন। ক্লাব ক্যারিয়ারের গ্রাফ নিচের দিকেই নামছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে শক্ত জায়গা পাচ্ছেন না মাটির নিচে। কে জানে, আজকের ম্যাচ জেতানো সেই গোল রোহোকে ফিরিয়ে আনবে কি না! যেমনটা ছিলেন চার বছর আগের বিশ্বকাপে। রোহো আত্মবিশ্বাসী। আর এই রসদ যে অধিনায়ক দিয়েছেন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞার শেষ নেই, ‘মেসি আমাদের অধিনায়ক। মেসি বিশ্বের সেরা অধিনায়ক। আর আমিও ওই গোলটা করতে পেরে ধন্য। কী অবিশ্বাস্য লাগছে!’

Print Friendly, PDF & Email