দ্বিতীয় সন্তান নেয়ার আগে কতটা সময় নেয়া উচিত?
অনলাইন ডেস্ক : নতুন এই গবেষণা বলছে একজন মায়ের আবার সন্তান নিতে হলে সেক্ষেত্রে তার অন্তত এক বছর সময় নেয়া উচিত।
গবেষকরা মনে করছেন, এ সময় নেয়া হলে সেটি মা ও বাচ্চার কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইনে এ বিষয়ে ১৮ মাস বিরতি নেয়ার পরামর্শ দেয়া আছে।
এখন গবেষকরা বলছেন এক বছরই যথেষ্ট, আঠার মাস বিরতি না দিলেও চলবে।
সাধারণত দুইবার গর্ভধারণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কম হলে তা অপরিপক্ব বাচ্চা কিংবা আকারে ছোট বাচ্চা জন্ম দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
আর নবজাতক ও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকির বিষয় তো আছেই।
গবেষকরা বলছেন, নতুন গবেষণালব্ধ উপাত্ত বয়স্ক নারীদের জন্য সহায়ক হবে।
সিনিয়র একজন গবেষক ড. ওয়েন্ডি নরম্যান বলছেন, পঁয়ত্রিশের বেশি বয়সী নারীদের যারা আবারো মা হতে চান তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক খবর আছে।
জামা ইন্টারনাল মেডিসিনে সম্প্রতি এ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের উদ্যোগে কানাডায় প্রায় দেড় লাখ শিশু জন্মদানের ওপর এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দুইবার গর্ভধারণের বিরতির সময় হিসেবে এক থেকে দেড় বছর সময়সীমাটি আদর্শ সময়।
যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিরতিটি দুই বছর হওয়া উচিত এবং কোনোভাবেই দেড় বছরের কম হওয়া উচিত নয়।
গবেষণায় আরও যেসব তথ্য উঠে এসেছে:
•এক বছরের কম সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ করলে সেটি যে কোনো বয়সের নারীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
•কিছু ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের বেশি বয়সের নারীর জন্য ঝুঁকি বেশি তবে সব নবজাতকের জন্য ঝুঁকির
•শিশু জন্মের ছয় মাসের মধ্যে ৩৫ বছর বয়সী কোনো নারী আবার গর্ভবতী হলে সেটি মায়ের মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে
•তরুণী কেউ ছয় মাসে আবার গর্ভবতী হলে তার ঝুঁকি আট শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে অপরিপক্ব বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।
তবে গবেষকরা বলছেন, এ গবেষণা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বেশি বয়সী নারীদের জন্য। যদিও গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে কেবল কানাডায়। তাই এটি কি করে বিশ্বের সর্বত্র প্রয়োগযোগ্য হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গবেষক ড. সোনিয়া হার্নান্দেজ বলছেন, গবেষণায় বিভিন্ন বয়সী নারীদের বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে।
তার মতে অল্প সময়ের ব্যবধানে গর্ভধারণ আসলে অপরিকল্পিত গর্ভধারণেরই বহিঃপ্রকাশ, বিশেষ করে তরুণী মায়েদের ক্ষেত্রে।
এক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন গবেষকরা যেগুলো অনুসরণ করলে ঝুঁকি কমতে পারে।
তাছাড়া তারা মনে করেন নারীদের জন্য বিশেষজ্ঞ সহায়তাও আরও সহজলভ্য হওয়া উচিত।
আরো পড়ুন: নিয়মিত ফাস্টফুডে যে বিশেষ সমস্যা হতে পারে নারীদের
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৫ মে ২০১৮
যে নারীরা নিয়মিত ফাস্টফুড খান কিন্তু ফলমূল কম খান, তারা গর্ভধারণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।
৫৫৯৮ জন নারীর ওপর একটি গবেষণার পর দেখা গেছে, যারা ফাস্টফুড খান না, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে চার বা আরো বেশিবার ফাস্টফুড খান, তাদের গর্ভধারণে অন্তত একমাস সময় বেশি লাগে।
তাদের সন্তান ধারণ করতেও বেশি সময় লাগে বলে ওই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা প্রমাণ করছে যে, ভালো খাবার খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য আর আয়ারল্যান্ডের নারীদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রথম সন্তান ধারণের কয়েক মাস আগে তারা কোন ধরণের খাবার খেয়েছিলেন।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, যে নারীরা মাসে তিনটার কম ফল খেয়েছেন, তাদের গর্ভধারণে নিয়মিত ফলাহারীদের তুলনায় দেড় মাস সময় বেশি লাগে।
তারা দেখেছেন, যারা ফল কম খায় বা ফাস্টফুড বেশি খাচ্ছেন, তাদের অনেকে পুরো বছর জুড়ে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ করতে পারেননি।
তবে কোন যুগলের পুরুষ সঙ্গী যদি ফাটিলিটি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গবেষণা দলের প্রধান, ইউনিভার্সিটি অব এডিলেডের অধ্যাপক ক্লারি রবার্টস বলছেন, ‘এই পর্যবেক্ষণ বলছে যে, ভালো মানের খাবার খাওয়া আর ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে পারলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করা যায়।’
তবে অনেকে এর সমালোচনা করে বলছেন, এই গবেষণায় অল্প কিছু খাবারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
কিন্তু গর্ভধারণে হয়তো আরো অনেক বিষয়ের প্রভাব থাকতে পারে।
এমনকি বাবাদের খাবারের বিষয়ে এখানে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।
তারপরেও এই গবেষণাটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অধ্যাপক জিনো পেকোরারো বলছেন, ‘সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা মনে করেন, এই গবেষণা সেটিকেই সমর্থন করেছে যে, যে যুগলরা সন্তান নিতে চান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।’ সূত্র: বিবিসি