শনিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০১৮ ইং ১৯শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বাংলার বাঘ মেরে যৌনক্ষমতা বাড়িয়েছে চীন!

বাংলার বাঘ মেরেই দেশের মানুষের যৌনক্ষমতা বাড়িয়েছে চিন। চিনেরা কিনা খায়? গুবরে পোকা আরশোলা, শুঁয়োপোকা থেকে ফরিং সমস্ত। এই তালিকায় বাঘ এক্কেবারে নতুন তথ্য। বাঘের মাংস থেকে একপ্রকার ওষুধ তৈরি করছে চিন যা যৌনক্ষমতাবর্ধক। ওষুধ তৈরির এই পদ্ধতিই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বন দপ্তরের শঙ্কার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বক্সার বাঘ না থাকার অন্যতম কারণ এটাই হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

বক্সা, রাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পট। প্রত্যেক বছর বক্সা ফোর্ট থেকে শুরু করে বক্সার জঙ্গল দেখার জন্য বহু মানুষ ভিড় জমায় সেই পাহাড়ি পথে। বক্সা জঙ্গলে প্রবেশের মুখে বড় বড় করে লেখা রয়েছে ‘বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট’ অর্থাৎ এখানে বাঘের বিচরণ রয়েছে।

কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল এখানে কোনও বাঘ নেই। বনদপ্তরের রেকর্ড বলছে গত ২৫-৩০ বছরে বক্সার জঙ্গলে বাঘের দেখা মেলেনি। বছরখানেক আগে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে একটি বাঘের ছবি ধরা পড়েছিল বক্সায়। পড়ে ছবি বিশ্লেষণ করে বনদপ্তর জানিয়েছিল ওই বাঘ ভুটান পাহাড় থেকে আসা। এই ভুটান পাহাড়ই শঙ্কার কারণ রাজ্য বনদপ্তরের। কারণ বক্সা পাহাড়ের অপরদিকেই ভুটান পাহাড়। সেখানে সবজায়গায় কাঁটাতার বসানো নেই। প্রশ্ন উঠছে বাঘ যদি পাহাড় টপকে বক্সায় আসতে পারে। চীনের চোরাশিকারিরা তাদের দেশের খুব কাছেই থাকা ভুটানের পাহাড় দিয়ে বক্সায় না আসা কোনও অসম্ভব ব্যপার নয়।

বনদপ্তরের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, ‘গত পঁচিশ ত্রিশ বছরে এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে একেবারে হলফ করে বলা শক্ত। চোরাশিকারিরা যা খুশি করতে পারে।’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত পঁচিশ ত্রিশ বছরে বাঘ না দেখতে পাওয়ার কারণ এটাই হতে পারে। এখন না হলেও আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। কে বলতে পারে ওই সীমানা দিয়ে চোরাশিকারিরা ঢুকে বাঘ মেরে নিয়ে যায়নি বা এখান থেকে বাঘ মেরে চিনে পাচার হয়নি। সে কারণেই হয়তো টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট হয়েও বক্সায় কোনও বাঘ দেখতে পাওয়া যায় না।’

তাঁর শঙ্কার কারণ আরও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগে তো লুকিয়ে চুরিয়ে হতো। এখন তো বাঘ মারার জন্য চিন শিলমোহর দিয়েছে। চোরাশিকারিরা তো এবার লাফিয়ে পড়বে। পাশাপাশি আমাদের দেশের এক শৃঙ্গ গণ্ডারও বিশেষ মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। গণ্ডারের শিং থেকেও ওরা ওষুধ বানাচ্ছে বলে শুনছি।’

রাজ্য কি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে ? রবিকান্ত সিনহা বলেন, ‘এই জায়গাটা এমন একটা জায়গা যেটা পশ্চিমবঙ্গের সীমার মধ্যে হলেও এখানে যা ঘটনা ঘটে তার বড় দায়িত্ব যায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। ডোকালম ইস্যুও এখানে চলে আসছে। আমাদেরে কেন্দ্রীয় সরকারসহ অন্যন্য দেশ চীনের এই কাণ্ডকারখানা নিয়ে সরব হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়ে ওনারা দেখছেন কি করা যায়। ওখান থেকে যা অর্ডার আসবে সেই স্টেপ আমরা নেব।’ কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত একদলীয় সরকার ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা’ এবং ‘চিরাচরিত পদ্ধতিতে ওষুধ তৈরি’র ক্ষেত্রে গন্ডারের খড়্গ এবং বাঘের হাড়-সমেত বিভিন্ন দেহাংশ ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে!

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কয়েক বছর আগে চিন সরকার ‘বিপন্ন’ বন্যপ্রাণ প্রজাতিগুলির দেহাংশের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বুঝে সেই অবস্থান বদল করায় বাঘ এবং একশৃঙ্গ গন্ডারের চোরাশিকার বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিশারদদের মতে, সরকারি ভাবে ‘নিষিদ্ধ’ হলেও দীর্ঘদিন ধরে চিন এবং তাইওয়ানে লুকিয়ে বাঘ-গন্ডারের দেহাংশের ব্যবসা চলছে। যৌনক্ষমতা বর্ধক প্রাচীন চিনা ‘ওষুধ’ বানাতেই মূলত তা ব্যবহার করা হয়।

সূত্র: কলকাতা ২৪x৭