কী নিয়ে চিন্তায় মোস্তাফিজ ?
স্পোর্টস ডেস্ক : মোস্তাফিজুর রহমানকে সাধারণত এমন বিচলিত হতে দেখা যায় না। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাঁ হাতি পেসার বরাবরই নির্লিপ্ত, চুপচাপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমনের পর যখন ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছিলেন তখনো যেমন ছিলেন, মাঝে চোটাঘাত, ছন্দপতন, আবার ফিরে আসা—ব্যক্তি মোস্তাফিজে কোনো বদল নেই।
আজ দুপুরে অনুশীলন শেষে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের সামনে দেখা হতেই বিচলিত কণ্ঠে বললেন, ‘আমার একটা সমস্যা হয়েছে।’ সমস্যাটা ক্রিকেট-বিষয়ক নয়, তবে তাঁর মতো একজন তারকা ক্রিকেটারের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। উদ্বেগভরা কণ্ঠেই বললেন, ‘ফেসবুকে আমার আগে যে ভেরিফায়েড পেজটা ছিল, সেটি টেকনিক্যাল কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০-২২ লাখ ভক্ত, সমর্থক, অনুসারী হারিয়ে ফেলেছি! যেটি গত তিন-চার বছর ধরে তৈরি হয়েছিল।’
কোনো কিছুতে আফসোস নেই মোস্তাফিজের। আগের পেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাময়িক চিন্তায় পড়লেও এটি নিয়েও আফসোস নেই। সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি খুলেছেন। সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় ভক্তদের অনুরোধ করেছেন, নতুন পেজটি অনুসরণ করতে।
মোস্তাফিজের ক্যারিয়ারটাও এমন। আবির্ভাবেই আলো ছড়ানো বাঁহাতি পেসার ২০১৫ ও ২০১৬ সালটা কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতো। যে সংস্করণে খেলেছেন, যে দলে খেলেছেন, যে টুর্নামেন্ট কিংবা সিরিজে খেলেছেন, সাফল্য লুটোপুটি খেয়েছে তাঁর পায়ে। যখন এক এক করে পেরোতে শুরু করেছেন সাফল্যের সিঁড়ি, হোঁচট খেলেন চোটে পড়ে। কদিন পর পরই পড়েছেন নতুন নতুন চোটে। চোট থেকে ফিরে শুরু করতে হয়েছে শূন্য থেকে, যেভাবে এখন নতুন করে ফেসবুক পেজে ভক্ত-অনুসারী তৈরি করার কাজটা করতে হচ্ছে তাঁকে।
একইভাবে শূন্য থেকে শুরু করতে হচ্ছে সিলেটে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ টেস্ট দিয়েই তিনি অনেক দিন পর ফিরছেন ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে। কত দিন পর? স্মৃতি হাতড়ে মোস্তাফিজ মনে করিয়ে দেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের পর আর খেলিনি!’
ঢাকা টেস্টে ছিলেন! প্রতিবেদকের কৃত্রিম বিস্ময় দেখে কপট রেগে যান, ‘ওই টেস্টে এত ভালো বোলিং করলাম (স্পিন সহায়ক উইকেটে ম্যাচে পেলেন ৫ উইকেট), ভুলে গেছেন? স্পিনাররা যদি আরও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করত তাহলে হয়তো টেস্টটা জিতে যেতাম। না, না স্পিনাররা ভালো করেছিল। ব্যাটসম্যানদের প্রথম ইনিংসে আরও কিছু রান করা উচিত ছিল।’Ñবাঁ হাতি পেসারের স্মৃতিতে পুরো টেস্ট এভাবেই সাজানো।
পায়ের আঙুলের চোট মোস্তাফিজকে খেলতে দেয়নি জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভয়াবহ টেস্ট সিরিজটা, যেটি বাংলাদেশ হেরেছে যাচ্ছেতাইভাবে। ‘ফিজ’ ফিরছেন আবারও সাদা পোশাক রাঙাতে। সিলেট ভেন্যু নিয়ে অবশ্য বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই তাঁর, এখানে আগেও বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তা কেমন উইকেট প্রত্যাশা করছেন সিলেটে? আগেই যেটা বলা হয়েছে, মোস্তাফিজের কিছুতেই আপত্তি নেই, ‘উইকেট যেমনই হোক আমার কোনো আপত্তি নেই। স্পিন-সহায়ক উইকেট হলেও ভালো খেলতে হবে, পেস-সহায়ক হলেও ভালো খেলতে হবে। ভালো খেলাই যখন লক্ষ্য, উইকেট কেমন হবে সেটি নিয়ে ভেবে কী হবে?’
মোস্তাফিজের চিন্তা শুধু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আউটফিল্ড নিয়ে। মিরপুর কিংবা চট্টগ্রামের মতো আউটফিল্ড কোমল নয়। ঘাসের বুনট খুব বেশি ঘন নয়। যেহেতু পেস বোলিং করেন, আউটফিল্ড নরম-কোমল না হলে পায়ের নিচের ভাগে চাপ পড়ে। ওয়ানডে সিরিজে কনুইতে হালকা চোট পেয়েছিলেন। কদিনের বিশ্রামে অনেকটা সেরে উঠেছেন। নতুন করে চোটে কে পড়তে চায় বলুন! আর একটু-আধটু চোট যদি থেকেও থাকে, মোস্তাফিজের খেলতে আপত্তি নেই। বাংলাদেশ দলের হয়ে তিনি সর্বোচ্চ উজাড় করে দিতে তৈরি। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে কেউ একজন হঠাৎ বিপিএল প্রসঙ্গ তোলে তাঁর সামনে। ধমকের সুরেই বলেন, ‘যতক্ষণ বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে, কোনো টুর্নামেন্ট বা দলে খেলার কথা বলবেন না! সবার আগে দেশ।’
কথা বলেন কম, আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রকাশেও ভীষণ পরিমিত। কিন্তু প্রসঙ্গ যখন দেশ কিংবা জাতীয় দল, মোস্তাফিজের মতো নির্লিপ্ত মানুষও চুপ থাকতে পারেন না! সূত্র: প্রথম আলো