সবাই মিলে মিশে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: সংলাপে প্রধানমন্ত্রী
সংলাপে অংশ নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সময়ে কেমন উন্নয়ন হয়েছে তার বিচারের ভার আপনাদের, আমাদের সবাই মিলে মিশে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।বৃহস্পতিবার গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।সংলাপের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আপনারা এসেছেন গণভবন ও জনগণের ভবনে। এই ভবনে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশটা আমাদের সকলের। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমি এটা বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দেব।তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় বছর ১০ মাস হতে চললো, আমরা এই সময়ের মধ্যে দেশে কত উন্নয়ন করতে পেরেছি সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্রের যাত্রা এবং উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আজকের দিনটি বিরাট অবদান রাখবে বলে মনে করি।তিনি বলেন, দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম সেই দিন বদল হচ্ছে। এটাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন করতে হবে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছতে পারে সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রয়েছে ক্ষমতাসীন জোটের ২৩ নেতা।এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ এবং ড. আবদুর রাজ্জাক আলোচনায় অংশ নেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিমও আছেন এ সংলাপে।১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দীন খান বাদল সংলাপে অংশ নেন।
এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এস এম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিকউল্লাহ এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
এদিন সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে শুরু হয় বহু কাঙ্ক্ষিত সংলাপ। ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণভবনে প্রবেশ করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৫টায় কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসা থেকে যাত্রা শুরু করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।রওনা হওয়ার আগে নেতারা কামাল হোসেনের বাড়িতে পৌঁছে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আশা করি এই সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশবাসী ভালো খবর পাবে। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে।’ তিনি এর বেশি কিছু এ সময় বলতে রাজি হননি।সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত রোববার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান।এরপর ৩০ অক্টোবর সংলাপের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেয়া চিঠির জবাব দেয় আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্র ঐক্যফ্রন্ট আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের কাছে পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল।