প্রথম দিন থেকেই আমাকে বহু পুরুষের সঙ্গে…
ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় প্রতিনিয়ত গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশ যাচ্ছেন বহু নারী। তবে বুক ভরা যে আশা নিয়ে তারা যায় বিপরীতে ফিরে শূন্য হাতে। সাথে নিজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সম্ভ্রমটাও হারিয়ে ফেরে। সম্প্রতি সৌদি ফেরত নারী গৃহকর্মীদের এমন চিত্র দেখা যায়। এবার এই দৃষ্টান্তের সাক্ষী হলেন সাতক্ষীরা সদরের মাগুরা গ্রামের এক নারী(২০)। মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে সৌদি আরবের পতিতালয়ে তাকে বিক্রি করা হয়।
অবশেষে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বুধবার সকাল ৬টার দিকে তিনি ঢাকার শাহাজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং সন্ধ্যায় বাবা, খালু ও বোনের সঙ্গে নিজ বাড়ি সাতক্ষীরার মাগুরায় আসেন।
বাড়িতে ফিরে সৌদি আরবে অতিবাহিত করা দীর্ঘ সাড়ে আট মাসের কাহিনী বর্ণনা দিতে যেয়ে ওই নারী বলেন, হাসপাতালের সেবিকা হিসেবে মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে আমার প্রতিবেশি নাছিমা খাতুন ও খুলনার টুটপাড়া এলাকার আল আমিন ওরফে সোহাগ বাবু আমাকে সৌদি আরবে পাঠান।
সৌদি বিমানবন্দরে নামার পরপরই ফরহাদ দালালের মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’ এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’ এর কাছে চার লাখ টাকায় আমাকে বিক্রি করে দেয়। এরপর একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয় আমাকে। প্রথম দিন থেকেই আমাকে বহু পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়।
অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। আপত্তি করায় ইতোমধ্যেই আমার দু’স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ আগষ্ট পাচারকারী নাছিমা ও সোহাগ বাবুর গ্রেফতার হওয়ায় আমার উপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়।নির্যাতিতা ওই নারীর বাবা বলেন, বরিশাল র্যাব -৮ ও খুলনা র্যাব -৬ এর কোম্পানী কমান্ডার এর সহযোগিতায় দুই পাচারকারীকে আটক করে পুলিশ।
তবে সোহাগ বাবুর সঠিক ঠিকানা যাচাই ও কোন এজেন্সীর মাধ্যমে মেয়েকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে মামলার তদন্তকারি তৎকালিন কর্মকর্তা সাতক্ষীরা থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস তদন্তকালে নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি (অর্গান) উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, রাইটস যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ’র ঐকান্তিক চেষ্টায় মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহষ্পতিবার ওই নারীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করানো হবে।








