খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে গাড়ি, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
‘পালসার-ফেজার’ কিংবা ‘কারিশমা জেডএমআর’ সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অসংখ্য দামিদামি মোটরসাইকেল পড়ে আছে থানা কমপ্লেক্সের সামনে- খোলা আকাশের নিচে। শুধু মোটরবাইক নয়; পাশেই রয়েছে জরাজীর্ণ মাইক্রো, প্রাইভেট কার, অটো-ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবহনের স্তূপ। অযত্ন-অবহেলায় যন্ত্রাংশ খসে পড়া এসব বাহনের দৃশ্য কুমিল্লা কোতোয়ালি ও সদর দক্ষিণ মডেল থানা প্রাঙ্গণের। নিত্যদিনের রোদ-বৃষ্টি আর ধূলার ঝাপটা গায়ে মেখে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর একই স্থানে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে দুই থানার অন্তত ৪ শতাধিক যানবাহন; হারাচ্ছে চলাচলক্ষমতা। ফলে কমছে এর বাজার (নিলাম) দর, রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
কেবল এ দুটি থানা ই নয়, কুমিল্লার ১৭টি থানা কমপ্লেক্সের সামনের চিত্রই প্রায় অভিন্ন। চোরাই পথে দেশে আসা, নিবন্ধনহীন কিংবা অপরাধসংশ্লিষ্টিতায় জব্দ করা ২ সহস্রাধিক যানবাহন পড়ে আছে ১৭ থানার সামনে। যেগুলো নিয়ে বিপাকে আছে পুলিশও। আইনি জটিলতায় বছরের পর বছর এসব যানবাহন মামলার সুরাহা না হওয়ায় একদিকে যেমন সম্পদের উপযোগ কমছে তেমনি স্তূপ বড় হচ্ছে থানা প্রাঙ্গণে। দেখা দিয়েছে জায়গা সঙ্কট, বিঘ্ন ঘটছে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড।
সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের দাবি, জব্দকৃত যানবাহন রাখার জন্য আলাদা স্থানে নির্দিষ্ট গ্যারেজ করে দেওয়ার। এতে করে সুরক্ষিত থাকবে বাহন, সরকারের কোষাগারেও জমা হবে পর্যাপ্ত রাজস্ব।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় জব্দকৃত প্রায় ১৭৫টি মোটরসাইকেল, ৭০-৮০টি প্রাইভেট কার-মাইক্রোসহ অন্যান্য যানবাহন এবং শতাধিক রিকশা-ইজিবাইক রয়েছে। এসব গাড়ি একই স্থানে পড়ে আছে বছরের পর বছর। ৮/১০ বছর আগে আটক করা গাড়িও আছে এখানে। যার অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক গাড়ি রয়েছে যেগুলোর ভেতরে-বাইরে ধূলা-ময়লা জমে যন্ত্রাংশ ক্ষয়ে গেছে/ খসে পড়ছে।
একই চিত্র চোখে পড়ে সদর দক্ষিণ মডেল থানা প্রাঙ্গণেও। এখানে জমে আছে জব্দকৃত শতাধিক মোটরসাইকেল, অর্ধশতাধিক কার-মাইক্রো ও ট্রাক।খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এ থানায় বেশ কিছু গাড়ি আছে যেগুলো এক যুগেরও অধিক সময় আগে জব্দকৃত। সর্বশেষ ‘চিহ্ন’ হিসেবে এসব গাড়ির ‘বডিটা’ই কেবল টিকে আছে। বাকিগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে, ক্ষয়ে যাচ্ছে।জানতে চাইলে সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন উর রশিদ বলেন, জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে এগুলোকে খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। জব্দকৃত যানবাহন রাখার জন্য যদি একটা নির্দিষ্ট স্থান কিংবা গ্যারেজ থাকত তাহলে গাড়িগুলো নষ্ট হতো না। নিলাম থেকেও অধিক অর্থ পাওয়া যেত।
এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছালাম মিয়া বলেন, দৈনিক অথবা মাসে যে পরিমাণ গাড়ি আমাদের এখানে জমা হচ্ছে, সে অনুসারে মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আইনি জটিলতার ফলে জব্দ হওয়া বাহনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অল্প জায়গায় অধিক যানবাহন রাখার কারণে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশ। এ ছাড়া থানার সামনেই এত গাড়ি পড়ে থাকার ফলে অনেক সময় দৈনন্দিন কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়। এগুলো রাখার জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা থাকলে আর নষ্ট হতো না।
বিষয়টি নিয়ে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করার পরও কেন এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না- তা বুঝতে পারছি না। দ্রুততার সাথে এসব মামলা নিষ্পত্তি করলেই আমাদের সম্পদগুলো রক্ষা পাবে। সরকারও রাজস্ব পাবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ