দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের শুরুতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ, অধিকাংশ শিশুইআক্রান্ত
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট : ঋতু পরিবর্তণের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট সহ ১০জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘরে ঘরে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তারা ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও চিকিৎসকদের চেম্বারে। শীতের শুরুতেই সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও জ্বরে। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এ রোগের প্রবণতা দেখা দেয় বেশি, আর ঝুঁকিও রয়েছে তাদের। কোনো কোনো শিশু আবার আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। মৌসুমি এসব রোগ শিশু আর বৃদ্ধদের বেশি হলেও এতে আক্রান্ত রোগী ও অভিভাবকদের কোন রকম আতঙ্কিত হওয়ার কারন নেই। শীতের শুরুতেই ঠান্ডাসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কারণেই বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ।
মঙ্গলবার( ৩০ অক্টোবর ) বিকেলে বাগেরহাট জেলা সদর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে এবং অভিভাবক ও চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে জ¦র, হাপানী, ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪ দিন বয়সের শিশু থেকে শুরু করে প্রায় বৃদ্ধাসহ শত শত রোগি চিকিৎসারত রয়েছেন। কর্তব্যরত নার্স জানান, শীতের শুরু থেকে প্রতিদিন নিউমোনিয়া, জ¦র, হাপানীসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫-৩০ জন করে শুধু শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। জানা গেছে, ঠান্ডাজনিত ও বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার কারনে বিভিন্ন রোগীদের বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলা ও শহরের বেসরকারী ক্লিনিকগুলোতে ভর্তি করানো হচ্ছে। জেলার নিম্নবিত্ত পরিবারের রোগীরা বেশি টাকা খরচ করতে না পারায় বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালের ৩য় তলায় শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট সিটের তুলনায় দ্বিগুন রোগী বৃদ্ধি রয়েছে।এদিকে, শিশু ওয়ার্ডে নির্ধারিত শয্যার কয়েকগুন বেশি রোগী থাকায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে থেকে সেবা নিতে হচ্ছে তাদের।শিশু রোগীদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালে এসে বেড পাইনি। ঠান্ডায় ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেঝেতেই শুয়ে আছেন তারা। বেশি ঠাসাঠাসিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। নার্সরা ঠিকমতো আসছে না। এছাড়া ওষুধ ঠিকমতো দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশুদের ঠিকমতো টিকা প্রদান ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।তাছাড়া ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখা এবং গরম কাপড় পরিধান করানো অত্যন্ত জরুরি। ডায়রিয়া এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘনোঘনো স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও রোটারিং টিকা দিলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
তিনি আরও বলেন, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ পান করাতে হবে। সব শিশুর প্রতি যতœশীল হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। শিশুদের জ্বর, অস্বাভাবিক কাশি ও পাতলা পায়খানা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।