জীবন আনন্দে ভরাতে ১০ মিনিট
লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমাদের চারপাশের নিত্যদিনের সমস্যা এবং তা থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপের ফলে জীবন হয়ে ওঠে বিষাদময়। অথচ মাত্র এক কাপ চা পান করতে যে সময় লাগে সেই সময়টুকু ব্যয় করেই জীবনকে বদলে ফেলা সম্ভব। জীবনকে মানসিক চাপমুক্ত করতে মনোবিজ্ঞানীরা এতদিন ‘ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান’র কথা বলে এসেছেন। কিন্তু এবার নিত্যদিনের চর্চায় কীভাবে জীবনকে ইতিবাচক করে আনন্দময় করে তোলা যায় তা নিয়ে যুগান্তকারী কিছু ব্যবহারিক উপায় বাতলে দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ারের অধ্যাপক স্যান্ডি মান। আর এর জন্য একজনের প্রতিদিন খরচ হবে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।
অল্প কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলেই চাপ থেকে বেরিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠবে মন। এর জন্য তিনি প্রথম যে কাজটি করার পরামর্শ দিয়েছেন তা হলো, যখনই কোনো কাজে অনেক বেশি চাপ মনে হবে, ক্লান্তি চলে আসবে তখনই কাজটিকে বাদ দিতে হবে। অন্তত সেই সময়ের জন্য এটিকে গুরুত্বহীন হিসেবে উপেক্ষা করতে হবে। পরবর্তীতে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে নতুন করে শুরু করলে ভালো ফল মিলবে, মনোযোগও বাড়বে আগের চেয়ে বহুগুণ।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই ব্যক্তিগত ডায়রিতে জীবনের খারাপতম সময়ের বাজে পরিস্থিতি থেকে মুক্তির কথা লিখে রাখেন। এটি মানুষকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। খারাপ সময়ের কথা স্মরণ করে বর্তমান সমস্যাকে বিবেচনা করলে খুব সহজেই উজ্জীবিত হওয়া যায়। অন্যদিকে কেউ যদি খারাপ সময়কে বয়ে নিয়ে বেড়ায় তাহলে তা তার মধ্যে এমন কিছু মানসিক চাপ তৈরি করবে যা শুধু অসুখী হওয়ার প্রবণতাই বাড়াবে। এইভাবে অনেকেই তার নিজের জীবনের অনেক সমস্যাকে মোকাবিলা করতে পারেন।
তৃতীয় যে কাজটির কথা তিনি বলেছেন তা হলো দানশীলতা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দানশীলতা থেকেও মানসিক শক্তি বাড়তে পারে। পরোপকারী মানসিকতা অনেক সময় মানুষকে সুখী করে তুলতে পারে। নিজের কাছে থাকা বাড়তি টাকাটা বাইরে খাওয়া-দাওয়া কিংবা আমোদ-প্রমোদের জন্য ব্যয় না করে তা দিয়ে মানুষের উপকারে দান করলে তা আপনাকে আরও বেশি সুখী করবে। এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে পারলে প্রতিনিয়তই ভালো থাকা সম্ভব। এমনকি দুশ্চিন্তা কিংবা হতাশার বদলে আপনি তখন পরবর্তী ভালো কাজের সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন।
এছাড়া যখন জীবনে বড় কোনো সমস্যা এসে হাজির হবে তখন এটি নিয়ে বিচলিত না হয়ে বরং কিছুটা সময় নেওয়া উচিত। সমস্যার কারণে এক সময় একঘেয়েমি প্রকট আকার ধারণ করবে, আর এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই কোনো না কোনো সমাধান আপনি খুঁজে পাবেন। এটিকে তিনি এইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যখন সমস্যা সহ্যের সীমা লঙ্ঘন করবে তখনো নিজেকে শান্ত রাখতে হবে, পুরো বিষয়টির একটি চিত্র কল্পনা করতে হবে। সমস্যা যতই বড়ো হতে থাকুক না কেন এতে বিচলিত না হয়ে এটিকে বড় হতে দিয়ে এর মধ্য দিয়ে সমাধান খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিষয়টিকে অনেকের কাছে স্ববিরোধী মনে হলেও এটিকে তিনি দারুণ কার্যকর এক সমাধান হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন যে, জীবনকে ১০ মিনিট সময় দেওয়ার এই কৌশল কিন্তু অলৌকিক কিছু ঘটাবে না। যাদের মানসিক সমস্যা গভীরে প্রবেশ করেছে তাদের অবশ্যই চিকিত্সকের অধীনে থাকা উচিত। কিন্তু যারা শুধু মানসিকভাবে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত মনে করছেন এবং মানসিক চাপ অনুভব করছেন তারা এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে খুব সহজেই জীবনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।-বিবিসি।