মালয়েশিয়ায় ‘বাতু কেভ’ এর সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হবেন!
---
”বাতু কেভ” বাতু শব্দের অর্থ পাথর আর কেভ মানে গুহা তার মানে বাংলায় এটির অর্থ ”পাথর গুহা” ৷
বাতু কেভ সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার স্থান৷ বাতু কেভ এলিমস্টোন চুনাপাথর এর পাহাড় যার মধ্যে তিনটি বড় গুহা ও মন্দির রয়েছে ৷ মূলত: সুঙ্গাই বতু (পাথর নদী) নাম থেকে এর নামকরণ করা হয় ৷
এটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের সন্নিকটে গাম্বাক সেলাংগর নামক স্থানে অবস্থিত৷ হিন্দু ধর্মের মানুষদের ভারতের বাইরে সবচেয়ে জনপ্রিয় তীর্থস্থল ও মালয়েশিয়ান হিন্দু উৎসবের কেন্দ্রীবিন্দু এই বাতু কেভ৷ এই জায়গা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের তীর্থস্থল হলেও এখানকার নানা সৌন্দর্য মন কেড়েছে পর্যটকদের৷
প্রতিদিনি শত শত দেশী বিদেশী পর্যটক আসে এই জায়গা পরিদর্শনের জন্য৷কুয়ালালামপুর শহর থেকে কাছে হওয়ায় ছুটির দিনগুলোতে এখানে ভিড় জমায় মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও৷স্থলভূমি থেকে প্রায় ১০০ মিটার উঁচুতে প্রধান তিনটি গুহা ও ছোট ছোট কিছু অংশ আছে৷
সব থেকে বড় ক্যাথিড্রল গুহা যা মন্দির গুহা হিসেবেই বেশি পরিচিত এবং এই গুহার উপরে উঁচু ছাদও রয়েছে৷ তার কিছুটা নিচে পাহাড়ের তীক্ষ্ণ প্রাচীরে ঘেরা রামায়ণ গুহা, যার ভেতরটা অন্ধকারাচ্ছন্ন৷ রামায়ণ গুহার পথে হনুমানের ১৫ মিটার লম্বা একটি মূর্তি আছে৷ রামায়ণ গুহা পরিদর্শন করতে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট অংকের অর্থ ফি গুনতে হবে৷তবে এই একটি গুহা ছাড়া আর সব কিছু কোন রকম ফি প্রদান ছাড়াই পরিদর্শন করা যায়৷
এতক্ষণ যে সৌন্দর্যের কথা পড়েছেন তা দেখতে হলে আপনাকে কিছুটা কষ্ট করতে হবে, সাথে সাবধানতাও অবলম্বন করতে হবে৷প্রায় ১’শ মিটার উঁচুতে গুহা পরিদর্শন করার জন্য ২৭২ টি ধাপের সিঁড়ি বেয়ে উঁচুতে উঠতে হবে৷এই সিঁড়ি কিছুটা খাড়াভাবে তৈরি করা হয়েছে তাই সাবধান থাকতে হবে৷
এখানে বেশ কিছু ছোট-বড় বানর আছে।এরা যে একেবারে শান্ত স্বভাবের, তা কিন্তু নয়৷তারা পর্যটকদের সাথে বাদরামিও করে থাকে৷সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় হাত থেকে মোবাইল বা খাবার ছিনিয়ে নিতে পারে তাই ছবি তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে৷গুহা পর্যন্ত পৌঁছানোর সিঁড়ির নিচে বা প্রবেশ পথেই দেখা মিলবে শত শত কবুতর এর৷তারা ঝাঁকে ঝাঁকে নিচে নেমে এসে পর্যটকদের দেয়া খাবার খায়, তাই কবুতরগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়৷
পাহাড়ের নিচে আরও দুটি গুহা মন্দির আছে৷আছে হিন্দু মূর্তি, ছবিপূর্ণ আর্ট গ্যালারি ও যাদুঘর গুহা৷এগুলো ২০০৮ সালে খোলা হয়েছে৷সিঁড়ির নিচে ডান পাশে ৫২.৭ মিটার বা ১৪০ ফুট উচ্চতার হিন্দু লর্ড মুরাগন এর মূর্তি রয়েছে যা বাতু কেভ এর প্রতিক হিসেবে পরিচিত এবং এটিই বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতা সম্পন্ন মুরাগন মূর্তি৷এটি নির্মাণ করতে ৩ বছর সময় লেগেছে, যাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ মিলিয়ন রুপি৷এই মূর্তি বাহির থেকে দেখতেই শুধু সোনালি রঙের নয়, থাইল্যান্ড থেকে আনা ৩০০ লিটার স্বর্ণের পেইন্ট দেয়া হয়েছে এই মূর্তিতে৷
ইতিহাস বলে, বাতু কেভ এর চুনাপাথরের ধরণ দেখে ধারনা করা হয় এই গুহার বয়স ৪০০ বিলিয়ন বছর হতে পারে৷তেমুয়ান উপজাতির আদিবাসীরা কিছু গুহার প্রবেশদ্বার তাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতো৷১৮৬০ সালের গোড়ার দিকে চীনা বসতিরা তাদের শবজি উৎপাদনের জমি গঠনের জন্য খনন শুরু করে, পরে ১৮৭৮ সালে চুনাপাথরের এই পাহাড় বিখ্যাত হয়ে ওঠে৷