রংপুরে সংঘর্ষ: ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
---
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রংপুরে সংঘর্ষ, অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ৮টায় রংপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহম্মেদ, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক বিপিএম, পিপিএম, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকে।
জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান। কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী এ ঘটনায় জড়িত উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার কথা জানান।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান রাত সাড়ে ৯টায় জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকের খবরের সত্যতা নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার কোনটিই করেননি পুলিশের কর্মকর্তারা।
এর আগে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে শুক্রবার জুমা নামাজের পর সদর উপজেলার পাগলাপীর শলেয়া শাহ এলাকার ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭/৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুঁড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে ওই এলাকার টিটু চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তি ধর্ম অবমাননামূলক কটূক্তি ও আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরই প্রতিবাদে শুক্রবার নামাজের পর স্থানীয় মুসল্লিরা একজোট হয়ে পাগলাপীর বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় ওই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আশপাশের কয়েক হাজার মুসল্লি যোগ দেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও গ্রামবাসী ঠাকুরপাড়ার ৭/৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
এ সময় পুলিশ বাধা দিলে মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে হাবিব (২৭) নামে এক যুবক নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হাবিব ওই এলাকার একরামুল হকের ছেলে। আহতদের মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।