আকতার হোসেন ভুইয়া : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পব্ত্রি কাবা শরীফ অবমাননার করে আপত্তিকর ছবি পোষ্ট করার প্রতিবাদে মিছিল চলাকালে উপজেলা সদরে বেশ কয়েকটি মন্দির ও বাড়ি ঘর এবং বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুরের অভিযোগে দু‘টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। নাসিরনগর থানা সূত্রে জানা যায়, রবিবারের হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে । উপজেলার দত্ত বাড়ির মন্দিরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় কাজল জ্যোতি দত্ত বাদি হয়ে একটি ও গৌর মন্দিরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় উপজেলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চন্দ্র চৌধুরী বাদি হয়ে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। উভয় মামলাতেই অজ্ঞাতনামা সহস্্রাধিক লোককে আসামী করা হয়। হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে গত রবিবার রাতে ৬ জন আজ সোমবার সকালে ২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের নাম জানা যায়নি। এ ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবদুল কাদের জানান,এ ঘটনায় সহস্্রাধিক লোককে আসামী করে থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় ৮জনকে আটক করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে বর্তমানে নাসিরনগরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে আজ সোমবার বিকালে হামলা ভাংচুরের সৃষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মধ্যে সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল সোমবার সদর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এক শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ রেজওয়ানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম,উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব,মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা হামিদা লতিফ পান্না,উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ডাঃ রাফিউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম,পীরজাদা রিয়াজুল করিম,সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার রায়,মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদ প্রভাষক নির্মল চন্দ্র চৌধুরী,এস এম শীদুল্লাহ ও অরুন জ্যোতি ভট্রাচার্য প্রমূখ। সভায় জেলা প্রশাসক বলেন,সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ও ভাতৃত্ববোধের মধ্যে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীত রক্ষাসহ নাশকতা রোধে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে সচেতন ভূমিকা রাখতে তিনি আহবান জানান। শান্তি সমাবেশে সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,মসজিদের খতিব,ইমাম,পুরোহিত,হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ।
উল্লেখ্য,গত শনিবার উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পবিত্র কাবা শরীফ অবমাননার করে আপত্তিকর ছবি পোষ্ট দেয়। এনিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে রসরাজ দাসকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় রবিবার সকালে উপজেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও হেফাজত ইসলামের উদ্যোগে পৃথক দুটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল দুটি উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে একদল লোক বের হয়ে প্রায় ২০/২৫টি হিন্দু বাড়ি-ঘর এবং দত্তবাড়ি মন্দির, জগন্নাথ বাড়ি মন্দিরসহ ৬টি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করে। এসময় হামলাকারীরা ব্যাপক লুটপাট ও করে। তাদের হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক জন আহত হয়।