আবারও স্বরূপে ফিরেছে র্যানসমওয়্যার, সতর্ক থাকার পরামর্শ
---
দীর্ঘদিন ধরে র্যানসমওয়্যারের আক্রমণ চললেও এ বছর বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে পৌঁছেছে। তাই ২০১৭’কে বলা হচ্ছে র্যানসমওয়্যারের বছর। আগে এটি শুধু সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হুমকি ছিল। তবে কয়েক মাস ধরে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্যও আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে র্যানসমওয়্যার।
এ বছরকে র্যানসমওয়্যারের চূড়ান্ত বিকাশের সময় হিসেবে দেখছেন প্রযুক্তিবিদরা। গত বছর ভাইরাসটি স্বাভাবিক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন করলেও খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। তবে চলতি বছর মে থেকে জুন পর্যন্ত ছয় সপ্তাহের মধ্যে সবার নজরে আসে র্যানসমওয়্যারের আক্রমণের বিষয়টি। এরপর থেকেই সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
‘র্যানসম’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ‘মুক্তিপণ’। অর্থাৎ র্যানসমওয়্যারের সম্পূর্ণ অর্থ দাঁড়ায়— এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি। শুরুতে ভাইরাসটি ব্যবহারকারীর ডিভাইসে ঢুকে এর সব ডেটা (তথ্য) নিয়ন্ত্রণে নেয়। ফলে ব্যবহারকারী তার নিজের ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ হারায়। তবে আবারও ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ পেতে গেলে ব্যবহারকারীকে ব্যয় করতে হয় অর্থ। মূলত এ কারণেই সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে র্যানসমওয়্যার।
গত মে মাসে র্যানসমওয়্যার ভাইরাসের মাধ্যমে কমপক্ষে ৭৪টি দেশে সাইবার হামলা চালানো হয়। এক মাসের ব্যবধানে গত ২৭ জুন দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ সাইবার হামলা চালায় র্যানসমওয়্যার। ইউক্রেন থেকে শুরু হওয়া এ হামলায় আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ডেনমার্ক, স্পেন, ফ্রান্স ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বহু প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ছিল ডেনমার্কের শিপিং প্রতিষ্ঠান মেরস্ক, রুশ তেল কোম্পানি রসনেফট, বিশ্বের বৃহত্তম বিজ্ঞাপনী সংস্থা ব্রিটেনের ডব্লিউপিপি’র মতো প্রতিষ্ঠান।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশনের দাবি, গত মে মাসের হামলায় স্বল্প পরিসরে হলেও ভুগেছে বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩০টিরও বেশি কম্পিউটার এই ধরনের হামলার শিকার হয়েছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটারের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও টেলিভিশন চ্যানেল আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে জুন মাসের আক্রমণের সময় দেশের কোনও কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত র্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত হলেও এই হিটলিস্টে ছিল না বাংলাদেশ।
মাঝে কিছুদিনের বিরতি দিয়ে আবারও স্বরূপে ফিরেছে র্যানসমওয়্যার। গত কয়েক দশকে এ ধরনের ভাইরাস রূপ বদল করে বিভিন্ন নামে এসেছে। সবশেষ ‘ব্যাড র্যাবিট’ নামে নতুন একটি র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ কয়েকটি দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে এই ভাইরাস ইতোমধ্যে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের একটি বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন হামলার শিকার হয়। ওয়ানা ক্রাই, গোল্ডেন আই ও নোট পেটায়া র্যানসমওয়্যারের মতো ব্যাড র্যাবিটও ভয়ংকর বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে র্যানসমওয়্যার আক্রমণের কোনও খবর আমরা এখনও পাইনি। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। এমনকি আমাদের কোথাও কোনও নেটওয়ার্ক আক্রান্ত হওয়ার খবরও আমাদের কাছে নেই।’
আইএসপিএবি’র সভাপতি মনে করেন, বাংলাদেশ আক্রান্ত না হলেও সবার সতর্ক থাকা উচিত। কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিশ্বে অনেক উপায় বের হয়েছে, তবে তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। আমাদের দেশে সেসব এখনও আসেনি। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও ব্যাড র্যাবিটের আক্রমণ বন্ধ করতে পারছে না বেশিরভাগ অ্যান্টিভাইরাস। এ প্রসঙ্গে দেশীয় প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ওপেন সোর্স সফটওয়্যার বিশেষ করে অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের ভুয়া একটি ডাউনলোড ফাইল থেকে এটি ছড়াচ্ছে। তাই ব্যবহারকারীদের উইন্ডোজ আপডেটেড রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
র্যানসমওয়্যার ভাইরাস বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। তাই এর আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাদের পরামর্শ— এজন্য কোনও অপরিচিত লিংকে ক্লিক করা যাবে না। ই-মেইলে কোনও অপরিচিত ঠিকানা থেকে লিংক এলে তা ওপেন না করে বরং ডিলিট করে দিতে হবে। এছাড়া ডিভাইসে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় সেগুলো সবসময় আপডেট রাখতে হবে।