বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিলো শেভরন। সেই সুযোগে শেভরনের তিনটি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্রের স্থানীয় স্থাবর সম্পত্তি কেনার কথা বিবেচনা করছে বাংলাদেশ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে অনলাইন পোর্টাল বাংলাট্রিবিউন।
বর্তমানে দেশে যত গ্যাস উৎপাদন হয় তার অর্ধেকেরও বেশি গ্যাস উৎপাদন করে শেভরন। তবে গত এক দশকের মধ্যে জ্বালানি তেলের দরপতনের ফলে তেল-গ্যাস কম্পানিগুলো এ বছর তাদের ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস কম্পানিগুলোর মধ্যে ইক্সন মবিল করপোরেশনের পর সবচেয়ে বড় কোম্পানি শেভরন। তেলের দরপতনের ফলে চলতি বছরের জুলাইয়ে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটে পড়ে শেভরন। ২০০১ সালের পর এর আগে এমন লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি কোম্পানিটিকে। শেভরন এশিয়ায় থাকা তাদের সম্পদ বিক্রি করে তিন বিলিয়ন ডলার পাওয়ার চেষ্টা করছে।
শেভরনের বিক্রির পরিকল্পনায় থাকা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রের সম্পদের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। এ সম্পদ ক্রয় করতে পারলে বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে বলে মনে করেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তর তেল কোম্পানি শেভরন জানিয়েছে, ২০১৭ সালের মধ্যে তারা তাদের ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি বিক্রি করে দেবে। জ্বালানির দাম পড়ে যাওয়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শেভরনের তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রও রয়েছে।
বাংলাদেশ এই গ্যাসক্ষেত্রগুলোকে ‘জাতীয় স্বার্থে’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে বিবেচনা করছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থের কথা ভেবে এই সম্পদ ক্রয়ের কথা বিবেচনা করছে। তবে আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।’
ইশতিয়াক আহমেদ জানান, পেট্রোবাংলা চাইছিলো যেন শেভরনই এই বিষয়ে একটি নিলাম ডাকে। এই সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করতে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ দিয়েছে পেট্রোবাংলা।
শেভরনের মুখপাত্র জানান, এই সম্পদের বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে তা বিক্রির বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সোমবার ইমেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো দাম পেলে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেব।’
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। ফলে জ্বালানি উৎপাদন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রীর দাবি মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হয়।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমেই এই সম্পদ কিনতে চায় বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এটা আমরা অন্যদের কাছে হস্তান্তর করবো কেন?’
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এই আগ্রহের ফলে তৃতীয় কোনও পক্ষের এই সম্পদ কেনা কঠিন হতে পারে। শেভরন উৎপাদিত জ্বালানি ভাগাভাগির ভিত্ততেই পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রয় করে আসছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এই সম্পত্তির ওপর অধিকার আছে বলে দাবি করেন পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হুসাইন মনসুর। তিনি বলেন, ‘এই সম্পত্তি ক্রয় করতে বাংলাদেশের তহবিলের সমস্যা হবে না। কেননা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
উল্লেখ্য, সূত্র: রয়টার্স।