নিউজ ডেস্ক : নরসিংদীতে কলেজ ছাত্রী মনিরা বেগমকে হত্যার অভিযোগে পুলিশ শিবপুরের আইয়ুবপুর ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া থেকে নিহতের বাবা খোরশেদ আলম ও ভাই সোহেল মিয়াকে আটক করেছে।
পুলিশের ধারণা, কম অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলের সঙ্গে প্রেমের জেরে মনিরাকে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের সম্মানহানীর অজুহাতে এ ধরণের হত্যাকাণ্ডকে ‘অনার কিলিং’ নামেই অভিহিত করা হয়।
মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এদিকে, কলেজ ছাত্রী মনিরা হত্যার বিচারের দাবিতে শোক র্যলি ও মানববন্ধন কর্মসূচি করেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে নরসিংদী ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নিহতের সহপাঠীরা এ মানববন্ধন ও শোক র্যালি করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা মেধাবী ছাত্রী মনিরা সরকারের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন, নরসিংদী ইমপিরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আলী চৌধুরী, কলেজের সভাপতি মাহবুব আলী চৌধুরী, আশরাফুল হক, আরাফাত খাঁন, ওমর ফারুক, কবির হোসেন, মো: আরিফুর রহমানসহ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, নিহত মনিরা শেরপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ৪র্থ মেয়ে। তিনি নরসিংদী ইমপেরিয়াল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত রোববার রাতে পুলিশ উপজেলার শেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ থেকে মাটি খুঁড়ে মনিরা বেগমের (১৮) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, একই গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে অষ্টম শ্রেণি পাশ নোবেল মিয়ার সঙ্গে মনিরার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
সে একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ করতো। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে তারা গোপনে প্রেম করে আসছিল। কয়েক দিন আগে এলাকায় তা প্রকাশ পায়। এরও কয়েকদিন পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারে।
কিন্তু তারা বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেননি। এক সপ্তাহ আগে মনিরার বাবা খোরশেদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি কোনোভাবেই এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না। মনিরাও বেকে বসেন। এক পর্যায়ে মনিরার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান বাবা। একই ইস্যুতে সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর বাবার সঙ্গে মনিরার বাগবিতণ্ডা হয়।
ওইদিনই তার বাবা মনিরাকে প্রচণ্ড মারধর করেন। এতে মনিরার মৃত্যু হয়। পরে গোপনে ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে মনিরার মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়া হয়।
বাড়ির অন্য সদস্যরা কান্নাকাটি করতে চাইলেও তার বাবার চোখ রাঙ্গানিতে কেউ সাহস করেনি কাঁদতে। থানায় কোনও জিডিও করেননি কেউ।
এছাড়া প্রতিবেশীরা মনিরাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা অসংলগ্ন কথা বলতেন। এক সপ্তাহ পর ধীরে ধীরে শেরপুর স্কুলের পাশে পচা দুর্গন্ধ বের হলে লোকজন পুলিশে খবর দেয়।
ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পরিবারের সব সদস্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। এতে প্রতিবেশীদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। পরে পুলিশ এসে রোববার রাত নয়টার দিকে মাটি খুঁড়ে মনিরার লাশ উদ্ধার করে।
শিবপুর থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমাদের ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে।
প্রকৃত ঘটনা উম্মোচনে আমরা আরো অধিকতর তদন্ত করবো। এই ঘটনায় শিবপুরের জাঙ্গালিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সোমবার নিহতের বাবা খোরশেদ আলম ও ভাই সোহেল মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।
তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।