নিজস্ব প্রতিবেদক : এই মুহূর্তে দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে কর প্রদানে সচেতনতা বাড়ছে দেশবাসীর। ইতিমধ্যে ২১ লাখ লোককে করের আওতায় এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অবশ্য এ হিসাব চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত। এর মধ্যে তিন লাখ নতুন। গত এক বছরে নতুনদের সনাক্ত করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র বলছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আয়করের আওতায় আসবে ২৫ লাখের বেশি মানুষ। সরকারের লক্ষ্য ২০১৯ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ লাখ লোককে করের আওতায় আনা।
তবে এনবিআরের এই কৃতিত্বের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো করের আওতায় থাকা ২১ লাখের মধ্যে কতজনের করযোগ্য আয় বা দেয়ার সামর্থ্য আছে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই সংস্থাটির কাছে। তবে সূত্র বলেছে, এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ লাখের করযোগ্য আয় রয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি কর সনাক্তকারী নম্বরধারী (ই-টিআইএন) বেড়েছে। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যাই বেশি। অষ্টম পে স্কেল কার্যকর হওয়ার ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের অনেকেই করের আওতায় এসেছেন এখন। এছাড়া বেসরকারি খাতেও যাদের করযোগ্য আয় রয়েছে, তাদের জন্য ই-টিআইন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেসব সরকারি চাকরিজীবীর মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদের করের আওতায় আনা হয়েছে এবারের বাজেটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, করের আওতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে এনবিআর। সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে ঢাকাসহ বিভাগীয় অন্যান্য শহরে সভা-সেমিনারের আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে।
সূত্র জানায়, কর সেবা জনগণের দুয়ারে পৌঁছে দিতে রাজধানী ঢাকাতে বেশ কয়েকটি সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে। আয়কর রিটার্ন পূরণসহ সব ধরনের সেবা দেয়া হবে এসব সেবা কেন্দ্র থেকে। তার বিনিময়ে কোনো অর্থ বা সার্ভিস ফি নেয়া হবে না।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বাদ দিয়ে বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় হলে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে। ন্যূনতম করের পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা। তবে বয়স্ক নাগরিক, নারী উদ্যোক্তা, প্রতিবন্ধী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আয়করে ছাড় দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশে ব্যক্তিশ্রেণী করদাতারা যে পরিমাণ কর দেন তা মোট আয়কর আদায়ের মাত্র আট থেকে ১০ শতাংশ। অথচ, বিশ্বের অন্যান্য মোট আয়কর আদায়ের অর্ধেকই আসে ব্যক্তিশ্রেণীর দেয়া কর থেকে। দেশে ১০০ টাকা আয়কর আদায়ের মধ্যে প্রায় ৬০ টাকা আসে উৎসে কর থেকে। বর্তমানে ৫৭টি খাত থেকে প্রযোজ্য হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। তারপরই রয়েছে করপোরেট বা কোম্পানি থেকে আদায় করা কর। এর পরিমাণ ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ। বাকিটা আসে ব্যক্তিশ্রেণী, ভ্রমণ করসহ অন্যান্য খাত থেকে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর থেকে এসেছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত সাড়ে ১২ ভাগে উন্নীত করা, যা এখন রয়েছে ১০ ভাগের নিচে। এমন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে আয়কর আদায়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার।