‘চাচাকে জিজ্ঞেস করবেন উনি কী খেতে চান’
গত রোববার (২৮ অক্টোবর) সরকারের সঙ্গে সংলাপ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরদিন সোমবার (২৯ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দলীয় শীর্ষ নেতাদের অনির্ধারিত এক বৈঠকে সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার চিঠি ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের বাসায় পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ। তাতে বলা হয়, আগামী ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত সোমবার রাতেই আবদুস সোবহান গোলাপকে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। গোলাপের হাতে চিঠি দিয়ে বলেন, সকাল বেলাই যেন এই চিঠি ড. কামাল হোসেনের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘চাচার কাছে জানতে চাইবে উনি কী খাবেন।’
আজ সকাল সাড়ে ৭টায় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ড. কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায় যান এবং বাসায় গিয়ে তিনি ড. কামালের কাছে প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি হস্তান্তর করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক তিনি ড. কামাল হোসেনকে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আপনাকে নৈশভোজ করতে বলেছেন এবং জানতে চেয়ে আপনি কী খেতে চান আর আপনারা কতজন আসবেন। ড. কামাল হোসেন এসময় গোলাপকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্টু (গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু) জানিয়ে দেবে।’
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকাকালীন সময়ে ড. কামাল হোসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইনমন্ত্রী ছিলেন। পরে ড. কামালকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও অর্পণ করেন বঙ্গবন্ধু। সেই সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চাচা বলে ডাকতেন।পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন। এরপর দলীয় সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি যখন প্রথমবারের মতো দেশে ফিরে আসেন তখনও শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনকে চাচা বলেই ডাকতেন।
সংলাপে প্রাধান্য পাবে যেসব বিষয় সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সংলাপে কি নিয়ে আলোচনা হবে? যেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফাকে আগেই নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে এর আগে আমরা যা বলেছি তা ছিল আমাদের পলিসি ম্যাটার।’ তার মানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কর্তৃক উত্থাপিত সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা হবে?
মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি খোলাসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্যকে আমরা সংলাপের আগেই নাকচ করছি না। তাদের দফার দুই একটি বিষয় আছে সংবিধান সংশোধনের বিষয় ও দুই একটি বিষয় আছে নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তবে সব কিছুই এখন টেবিলে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। আর প্রধানমন্ত্রী যখন চেয়েছেন, খোলা মনেই আলোচনা হবে’।
তিনি আরো বলেন, ‘তারা সংবিধান সংশোধন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সভা-সমাবেশের সমান অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে চান। সভা সমাবেশ তো করছেনই তারা। কিন্তু যখন শিডিউল (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল) ঘোষণা হবে, তখন সভা-সমাবেশে সমান অধিকারের বিষয়টি চলে যাবে একেবারেই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে। দে উইল ডিসাইড ইট’।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কিছু দাবি সংবিধান সম্মত নয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা (ঐক্যফ্রন্ট) তাদের দাবিতে অটল থাকবে, না সরে আসবে, দেখেন না কী হয়’!
সূত্র: বিডি-জার্নাল