প্রধানমন্ত্রীর কাছে মায়ের দুই কিডনি হারানোর বিচার চাইলেন রফিক সিকদার
ভুল চিকিৎসায় নিজের মায়ের দুই কিডনি হারিয়ে ক্লিনিক্যালি ডেড হবার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও ‘পদ্মাপাড়ের পার্বতী’ উপন্যাসের লেখক রফিক সিকদার।গতকাল (২৮ অক্টোবর) বিএফডিসির পরিচালক সমিতির স্টাডিরুমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলাম কিরণ, রফিক শিকদার, চিত্রনায়ক ওমর সানিসহ আরও অনেকে।তিনি বলেন, আমার প্রকাশিত উপন্যাস ‘পদ্মাপাড়ের পার্বতী’ ও প্রথম চলচ্চিত্র ‘ভোলা তো যায় না তারে’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করেছি।
ছোটবেলা থেকে আমার মা আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বড় করছেন। তিনি এখন কোমায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবি, তিনি যেন আমার মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৭ জুন রাজধানীর মিরপুরের বিআইএইচএস হাসপাতালে রফিকের মাকে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, মূত্রনালি ব্লক হয়ে কিডনি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়।
গত ০১ জুন তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের প্রফেসর হাবিবুর রহমান দুলালের তত্বাবধানে ভর্তি করানোর কিছুদিনের মধ্যেই রিলিজ দেয়া হয়।পরবর্তী মাসের ২৭ তারিখে হাসপাতাল থেকে ফোন করে তার মাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য বলা হয়। একদিন পর ফের অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের অধীনে ভর্তি করা হয়।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই চিকিৎসক তার বাম কিডনি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সেপ্টেম্বর মাসের ০৫ তারিখে অপারেশন হয়। রফিকের মাকে পোস্ট অপারেটিভে রাখার পর জানা যায় যে, তার ইউরিন প্রডাকশন বন্ধ হয়ে গেছে।কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, অপারেশনের পর রোগীর সুস্থ কিডনি আর কাজ করছে না। হাসপাতালের আইসিইউ খালি না থাকায় দ্রুত প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার।
রফিক তার মাকে ইনসাফ বারাকাহ কিডনি ও জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসক হুমায়ূন কবীর সেলিম কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাব এইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করাতে বলেন। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রোগীর পেটে কোনও কিডনিই নেই।অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলালের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রফিক সিকদারের মায়ের ডান কিডনি আছে। কিন্তু অপারেশনের পর ডান কিডনি হঠাৎ নন ফাংশনাল হয়ে যাওয়ার কারণে সিটিস্ক্যান ও আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কিডনি ভিজ্যুয়ালাইজ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ সামাদ জানান, শরীরে কিডনি থাকলে অপারেশন পরবর্তী নন ফাংশনাল হওয়া কিডনিও আল্ট্রাসনোগ্রাম বা সিটিস্ক্যান রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।রফিক সিকদারের দাবি, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল তার মায়ের কিডনি অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
কিন্তু এতে সদস্য করা হয় অভিযুক্ত অধ্যাপককেও। গণমাধ্যমের চাপে দুলাল অভিযোগ স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে বলেন, রফিক সিকদারের মায়ের বিনা খরচে কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি।