শুক্রবার, ২রা নভেম্বর, ২০১৮ ইং ১৮ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

আগে নিতাম ৪০ লাখ, এখন নিই ৮০ লাখ

কয়েক বছর ধরেই চলচ্চিত্র অঙ্গনের স্থবিরতার খবর নিয়মিত আসছে গণমাধ্যমে। এ থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্টরা দিয়েছেন নানা পরামর্শ। এরপরও কাটছে না মন্দাবস্থা। এর নেপথ্যে শিল্পী ও কলাকুশলীদের কোন্দলকে দায়ী করেন অনেকে। বিষয়টির সঙ্গে একমত ঢাকাই ছবির আলোচিত নায়ক শাকিব খানও।

২৮ অক্টোবর বিকেলে এফডিসির মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ঢালিউডের ব্যবসাসফল অনেক ছবির এই নায়ক।শামীম আহমেদ রনি নির্মিত ‘শাহেনশাহ’ ছবির শুটিংয়ের বিরতিতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন শাকিব। সে সময় এই প্রতিবেদক তার মুখোমুখি হন। এরপর দীর্ঘ আলাপে নিজের ক্যারিয়ার ও চলচ্চিত্রাঙ্গনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

চলচ্চিত্র অঙ্গনটা এখন একটা ‘ভয়ংকর’ জায়গায় রূপ নিয়েছে মন্তব্য করে শাকিব বলেন, ‘আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী আর কয়েকজন জুনিয়র মিলে ইন্ডাস্ট্রির এ অবস্থা তৈরি করেছে। এখন আমাদের পুরনো যে প্রযোজকরা আছে, তারা বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। আর নতুনরা তো আসতেই চায় না।’

একটা সময় অনেক ছবি নির্মিত হলেও গত কয়েক বছরে তা ‘আশঙ্কাজনক’ হারে কমে গেছে বলে মনে করেন শাকিব। সে জন্য ‘ভীতিকর’ পরিস্থিতিকে দায়ী করেন তিনি।

‘এখন কয়টা ছবির শুটিং হচ্ছে? সব মিলিয়ে ৫-৬টা। এত বড় একটা দেশ, অথচ মাত্র এই কয়েকটা ছবির শুটিং হচ্ছে! আমার যারা সহকর্মী আছে, তাদের হাতেই বা কয়টা ছবি আছে! যখন অ্যানালগ ছবির সময় ছিল, তখনো ১০-১৫টা ছবির শুটিং হইত। শুধু এই ভীতিকর অবস্থার কারণে প্রযোজকরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না।’

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনার প্রসঙ্গে টেনে এ নায়ক বলেন, ‘যিনি বা যারা নেতাগিরি দেখাইতে আসছিল, তারা নেতাগিরি দেখাইয়া গেছে, তাদের স্বার্থে; কিন্তু চলচ্চিত্রের অঙ্গনের স্বার্থে না। চলচ্চিত্রের মানুষের কিন্তু তাদের প্রতি এখন ঘৃণা তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের পেটে লাথি দিয়ে কখনো নেতাগিরি হয় না।’

‘আমি ১০-১৫ দিন পর গত পরশু থেকে এফডিসিতে শুটিং শুরু করেছি। খেয়াল করে দেখলাম, অনেকেরই চেহারা মলিন হয়ে আছে! কারণ তাদের হাতে কাজ নেই। সংসারও চলছে না ঠিকঠাক মতো। এরা ইন্ডাস্ট্রির প্রতি অনেক অন্যায় ও জুলুম করে ফেলছে। ওপরে তো একজন আছেন, তিনি তো সব দেখছেন।’

‘আমি এক জীবনে অনেক পেয়েছি। আগে রেমুনারেশন (পারিশ্রমিক) নিতাম ৪০ লাখ, এখন নিই ৮০ লাখ। আমি তো ফাইন্যান্সিয়ালি স্ট্যাবল। কিন্তু এ জন্য কি ইন্ডাস্ট্রির প্রতি দায়বদ্ধতার কথা ভুলে যাব? দিন শেষে এটাই আমার দেশ, এটাই আমার ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু কিছু নেতা ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে এমন স্বপ্ন অবাস্তব স্বপ্ন দেখাইছে, কোথায় তারা?

‘শুনেন, মাথা কেটে ফেলার অনেক প্ল্যান হইতে পারে, কিন্তু প্ল্যান সাকসেসফুল করা সম্ভব না। মানুষের অনেক ভালোবাসা আছে, শাকিব খানের ওপর।’

এ নায়ক মনে করেন, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিটাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে ‘অশুভ’ শক্তিটাকে ইন্ডাস্ট্রির বের করে দিতে হবে। এ নিয়ে তার ভাষ্য, ‘এরপরই ইন্ডাস্ট্রি আগের মতো পরিষ্কার হবে। তখন ইন্ডিাস্ট্রিতে পুরনো-নতুন প্রযোজকরা ঢুকবে, নিশ্চিন্তে সিনেমা বানাতে পারবে। দুই টাকা লাভ কিংবা লস হলেও তারা কাজ করবে।’

‘অন্তত এখনকার মতো অবস্থা হবে না। এটা আমার বিশ্বাস। অনেকেই আমাকে কেন্দ্র করে জল ঘোলা করে মাছ শিকার করার চেষ্টা করেছে, তাতে লাভ কী?’

সম্প্রতি গণমাধ্যমে শাকিবের সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা এস কে মুভিজের তিক্ততার খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে বেশ শোরগোল তৈরি হয়। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই নতুন ছবি করার আলাপ-আলোচনা হচ্ছে বলে জানান শাকিব।

ঢালিউডের এই নায়ক জানান, সম্প্রতি এস কে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা ও তার ছেলে হিমাংশু ধানুকা তাদের প্রযোজনায় দুটি ছবিতে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন তাকে। ছবিগুলোর শুটিং হবে লন্ডনে। তবে তিনি ছবি দুটিতে অভিনয় করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এরপর জানিয়েছেন না করার কারণ।

শাকিব বলেন, ‘এরপর আমি আমার দেশের লোকাল প্রোডাকশনের টানা বাংলাদেশে শুটিং করেছি। আমি চাইলেই সুযোগ লুফে নিতে পারতাম। কিন্তু নিইনি। আমার অনেক কাছের মানুষ বলেছে, কেন ছবি দুটি ছাড়লে তুমি। দরকারই বা কী। আমি দেড় কোটি টাকার দুটি প্রজেক্ট ছেড়ে দিয়েছি। এ জন্য কিন্তু সাহস লাগে, যেটা অনেকেরই নেই।’

‘আমি আবার ইন্ডিয়ান সিনেমা করব। তারা তো আমার শত্রু দেশ না। স্বাধীনতা যুদ্ধে তারাই সহযোগিতা করেছে। সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হলে সমাধান হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

শাকিব জানান, কলকাতার নির্মাতা রাজিব বিশ্বাসও তাকে গত কয়েকদিন ধরে ফোন করছেন কলকাতার আরেক প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের একটা ছবিতে কাজের বিষয়ে। এ বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি চলছে ক্যামেলিয়া গ্রুপের একটি ছবিতে অভিনয়ের কথা।

বিভিন্ন সময়ে বিদেশি ছবিতে অভিনয় করলেও দেশের স্বার্থ প্রাধান্য দেওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখতে চান শাকিব। তার মতে, ‘আমি দিন শেষে আমার দেশের স্বার্থটাই দেখব। কারণ যত যাই হোক, এটা তো আমারই দেশ, আমারই ইন্ডাস্ট্রি। যতটা পারা যায়, ডেভলপমেন্টে ভূমিকা রাখব। আমার বাবা-মা যদি আমাকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠায়, এরপর পড়াশোনা শেষ করে যদি বিদেশেই চাকরি করি, তাতে তো সেই দেশের মেধাই বাড়ল। আমাদের দেশের তো কিছূ হইল না।’

‘আমি দেশের বাইরে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রোডাকশনে কাজ করেছি। এরপর আমি দেশে ফিরে যে জ্ঞানটা অর্জন করেছি, সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। আমার জায়গা থেকে ডেভলপ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছু লোকের আবার সেটা সহ্য হচ্ছে না।’

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নিয়ে জানার জন্য মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অপ্রতুলতার কথা বলেন শাকিব। তার মতে, পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠান থাকলে দেশের লোকজন চলচ্চিত্রের খুঁটিনাটি বিষয়ে পারদর্শী হতে পারত।

‘আমাদের এখানে তো টেকনিক্যালি বিষয়গুলো শেখার কোনো ইনস্টিটিউট নেই, যার কারণে অনেকে শিখতে চাইলে শিখতেও পারে না। আমার সঙ্গে যে ডিরেক্টর কিংবা টেকনিশয়ানরা কাজ করতেছে, তারা কিন্তু ভালো ও গোছালো কাজের একটা টেস্ট পেয়ে গেছে। কারণ সবাই ভালো কাজ দিন শেষে করতে চায়’, বলেন শাকিব।

নিজের জায়গা থেকে ইন্ডাস্ট্রিটাকে নতুন করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন মন্তব্য করে শাকিব বলেন,‘অনেকটাই সাকসেস। আমাদের দেশেই তো সিনেমার বিরাট মার্কেট রয়েছে। আমি দিন শেষে ইন্ডাস্ট্রিকে কতটুকু দিতে পারলাম, সেটাই বিষয়। যে যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য কিছু করলেই কিন্তু দেশটা এগিয়ে যাবে।’

এ দিকে শাকিব খান জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের গল্পে একটি ছবিতে (নাম ঠিক হয়নি) অভিনয়ের জন্য সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। সেই গল্পে শাকিবের ব্যক্তিজীবনেরও কিছু অংশ থাকবে। এটি শাকিবের নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস কে ফিল্মস থেকে তৈরি হবে। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন শামীম আহমেদ। এখন চিত্রনাট্যের কাজ চলছে।

সূত্র: প্রিয়