নদীর জলে বেদনার অশ্রু
---
আল আমীন শাহীন : তিতাস পাড়ে আবারো কান্নার রোল শোকের মাতম। তিতাস শাখা নবীনগরের পাগলা নদীতে প্রাণ হারিয়েছে দুই জেএসসি পরীক্ষার্থী। লেখাপড়া করে একদিন বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে তাই জীবনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর পরীক্ষার্থীরা ঘর থেকে বের হয়েছিল সোনালী সকালে হাসিমুখেই, সেজেগুজে স্কুল ড্রেসে পরিপাটি হয়ে। নানা স্বপ্নের সারথী তারা তাই বাবা মা অভিভাবকের দোয়া ছিল সাথে। অংকুরেই স্বপ্ন ভঙ্গ। মর্মান্তিক নৌ -দূঘটনা কেড়ে নিয়েছে জেএসসি পরীক্ষার্থী নাদিয়া আর সোনিয়ার প্রাণ। নবীনগরের বীরগাও – এর শিবপুর আমতলীতে দিনে দিনে যে শিশুরা হাসিমুখে স্কুলে যেত, স্কুল মাঠে, গাঁয়ের পথে আনন্দ পদচারণা ছিল যাদের , পড়ার টেবিলে বাড়ির অঙ্গিনা, ঘরে, পরিবার পরিজন সহপাঠী শিক্ষকদের সাথে মিশে যারা ছিল সরব। সেই দুই স্কুল ছাত্রীর নিথর নিরব মৃতদেহ সবার সামনে। সন্তান হারা পিতা মাতা, আত্মীয় স্বজন, শিক্ষক সহপাঠীর চোখের জলে ভাসছে প্রাণহারা দুজনের নানা স্মৃতি। কান্নার রোল, শোক মাতমে শোকের ছায়া গোটা এলাকায়। মর্মান্তিক এ ঘটনায় মানুষের চোখের জল মিশেছে নদীর জলে। বইছে এখন শোক আর বেদনার ধারা। এক মর্মান্তিক দৃশ্যপট। জেএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রের অদূরে এসেও তীরের খোজ পায়নি দুজন। নৌকা ডুবে পাণ হানীতে ডুবেছে দুজনের জীবনপথ। ডুবেছে তাদের বাবা মা আত্মীয় স্বজন শিক্ষক সহ সকলের স্বপ্ন আশা আকাঙ্খা।
দূঘটনায় প্রাণহানী নতুন নয়,নবীনগরের নদী পথে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আগেও ঘটেছে। কারো মনে স্পস্ট কারো মনে ঝাপসা। বিভিন্ন ঘটনার পর শোক বেদনা, তদন্ত, মামলা অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু প্রতিরোধ পদক্ষেপ কতটুকুই বলিষ্ঠ করা গেছে সেই প্রশ্নই এখন তাড়া করছে মনে। দায় কার ? কে দোষী ? বলবো কার কাছে ? কে করবে প্রতিরোধ, কি করার ছিল? কি করেছি এসব প্রশ্নের উকিঝুকি বেদনা বিদূর মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নৌ -চলাচল আর নদী পথের নিরাপত্তা বিষয়টিকে আমরা কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছি সে ভাবনাই বারবার। এ ব্যাপারে যাদের উপর দায়িত্ব অর্পিত তাদের কতটুকু ভ’মিকা আছে সে বিষয়টি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু নবীনগরের কথাই যদি বলি , নদী বেস্টিত জনপদ নবীনগরবাসীর প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম এই পানি পথেই। সময়ে সময়ে উন্নয়নে এ পথে হারিয়ে গেছে পাল তোলা লগি আর বৈঠা মারা নৌকা। ইঞ্জিন নৌকায় চড়েই যাতায়ত করে মানুষ এখানে সেখানে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে নৌ রুটে স্পীড বোট মাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বাহারী রঙ্গে শত শত স্পীড বোট নদী ও এলাকার শোভাবর্ধন করেছে , যাতায়তকে করেছে সহজ। কিন্তু চালনার দক্ষতা নিয়ম নীতি প্রশিক্ষণ সহ চালক যাত্রীর সচেতনতার উন্নয়ন এং অস্তিত্ব এখানে প্রশ্ন বিদ্ধ এবং উপেক্ষিত। লক্কর ঝক্কর কাঠের তৈরীর নৌকায় সেলু মেশিন বসিয়ে বেপরোয়াভাবেই অদক্ষরাই এখানে চালাচ্ছে নৌ যান ধারন ক্ষমতার বেশী যাত্রী নিয়ে। সাঁতার না জানা যাত্রী, দূঘটনা প্রতিরোধ ব্যবসার সামগ্রী ছাড়াই ,ঠাসাঠাসি করে নৌকার ছইয়ের নীচে উপরে,তাড়াহুড়ো করে উঠানামায় দিনে দিনে বেড়েছে নৌকা, স্পীডবোট, চালক যাত্রী। কিন্তু নৌ যান চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ম নীতি চালু অথবা মানা হচ্ছে কি ? মর্মান্তিক ঘটনার পর পরিদর্শন, মায়া কান্না, পদক্ষেপের ভাবনা মনে আসলেও তার বাস্তবায়ন কি হয়েছে ? যাত্রীদের মূল্যবান প্রাণ রক্ষার জন্য চালকদের দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য যাত্রী চালকদের নিয়ম নীতি মানা প্রয়োজন তা কি অনুভব করছি কেউ। দায় কার , দোষ দেব কাকে? দায় চাপানোর জায়গাটুকুই খুজে পাওয়া এখানে দুষ্কর। “দূঘটনা ঘটবে, প্রাণহানী হতেই পারে” এমনই বাস্তবায় কেটে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আর এই কারণেই সোনিয়া নাদিয়ারা অকালে হারাচ্ছে প্রাণ। দুই কোমলমতি শিশুর প্রাণ হারানোর বেদনা বিদূর পরিবেশ আর কত? আর কতবার দেখতে হবে নদীপথের মর্মান্তিক ঘটনা। নবীনগরের মর্মান্তিক ঘটনা কি আমাদের করনীয়তায় জাগরণ ঘটাবে। নদীপথে নৌ চলাচল নীতিমালা, চালকদের প্রশিক্ষণ দক্ষতা সহ যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবী ।
লেখক : সিনিয়র সহ সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব , সম্পাদক নতুন মাত্রা।