g ওহীর জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ১২ই নভেম্বর, ২০১৭ ইং ২৮শে কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ওহীর জ্ঞান অর্জনের মর্যাদা

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ৩০, ২০১৭
news-image

---

ইসলাম ধর্ম ডেস্ক : আরবি ‘ইলম’ শব্দের বাংলা হলো বিদ্যা বা জ্ঞান। কুরআন ও হাদীসে ইলম শব্দ দ্বারা ওহীর ইলম বোঝানো হয়েছে। “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত পিন্ড থেকে। পড়, তোমার প্রতিপালক বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না।” (সূরা আলাক্ব: আয়াত ১-৫)। সবার আগে দীনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

ইক্বর দ্বারা দীনি ইলমকে বুঝানো হয়েছে। ইলমে দীন অর্জনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “তোমাদের মধ্য থেকে
যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি
করেছেন।” (সূরা মুজদালাহ: আয়াত-১১)। অর্থাৎ মানুষের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে ইলমে দ্বীন দান করেছেন তাদেরকে মান ইজ্জত মর্যাদা করে দেন। আল্লাহ তায়ালা সবাই কে ইলমে দীন দান করে না। যাকে কবুল করবে তাকেই দীনের জ্ঞান দান করেন। হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন, আল্লাহ যার জন্য মঙ্গল চান তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দিয়ে দেন। (বুখারী) আরেকটি হাদীসে
উল্লেখ আছে, হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ (ইবনে মাজাহ)। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়
বান্ধাদের দীনের ইরম দান করে তার জন্য মঙ্গল চান।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “অতঃপর ইলম অর্জন কর যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই।” (সূরা মুহাম্মদ: আয়াত-১৯)। আয়াতটি দ্বারা তাওহীদের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর সকল গুণগান যেমন আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এ বিষয়ের ইলম অর্জন করতে হবে। এটাই জীবনের প্রথম কথা হওয়া উচিৎ। ইলেম কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, ইলম তিন প্রকার প্রকাশ্য আয়াত, প্রতিষ্ঠিত সুন্নত এবং ন্যায্য ফরজ কাজ এ ছাড়া সবই অতিরিক্ত। (দারামী, আবু দাউদ)। ফরজ কাজ, সুন্নাত কাজ এবং প্রকাশ্যে কুরআনের আয়াতের ইলেম অর্জন করার প্রতি বেশি তাগিদ দিতে হবে এবং সকলকে অর্জন করতে হবে। সকল প্রকার ইলমের মধ্যে কিছু ইলম অপছন্দনীয় এবং ইসলামে হারাম তা করতে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসুল (সঃ) অন্য এক হাদিসে বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গিরা লাগায় অতঃপর তাতে ফুক দেয় সে মূলতঃ যাদু করে। আর যে ব্যক্তি যাদু করে সে মূলতঃ শিরক করে, আর যে ব্যাক্তি কোন তাবিজ কবজ লটকায় তাকে ঐ জিনিসের দিকেই সোপর্দ করা হয়। (নাসায়ী) আবু হুরায়রা (রাঃ) অন্য হাদিস বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের কাছে আসলো এবং গণক যা বললো তা সত্য বলে বিশ্বাস করলো, সে মূলতঃ মুহাম্মদ (সঃ) এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো। (আবু দাউদ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্যোতীষ বিদ্যার কিছু অংশ শিখলো সে মূলতঃ যাদু বিদ্যাই কিছু অংশ শিখলো। এ যত বাড়বে যাদু বিদ্যাও তত বাড়বে। (আবু দাউদ)। যাদু টোনা, তাবিজ কবজ লটকানো ইত্যাদি ইলম থেকে ফিরে আসতে হবে। এসব ইলম ইসলামে অবৈধ কাজ। আর এসব কার্যাদির উপর বিশ্বাস বা ভরসা করাটাও হারাম। এসব বিষয় ইসলামে নিষেধ। ইলমে দীন অর্জন করাটা ফরজ। এজন্য মুমিনদের দলে গিয়ে ইলমে দীন অর্জনের জন্য বের হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এ ইলম অর্জনের প্রতি জোর তাকিদ দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন, ‘আর মুমিনদের সবার জন্য একসঙ্গে বেরিয়ে পড়া যেহেতু সম্ভব নয়, তাই প্রত্যেক বড় দল থেকে একটি উপদল কেন বের হয় না, যাতে তারা ইলমে দীন শিক্ষা করব এবং (শিক্ষা সমাপ্ত করে) ফিরে এসে তারা তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করবে, যাতে তারা বিরত থাকে। ’ সুরা তওবা : ১২২। কোরআনের পাশাপাশি অসংখ্য হাদিসের মাঝে ইলমের গুরুত্বের কথা বিবৃত হয়েছে। ইলম অর্জনের সীমাহীন গুরুত্বের কারণে মহানবী (সা.) তাঁর সব উম্মতের ওপর ইলম অর্জন বাধ্যতামূলক ও আবশ্যক করে দিয়ে ইরশাদ করেছেন, ইলমে দীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমান নর- নারীর ওপর ফরজ। ’ বুখারি।

অন্য এক হাদিসে ইলম অর্জনের নির্দেশ দিয়ের সুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা ইলমে ফরায়েজ ও কোরআন শিক্ষা কর। কেননা আমাকে উঠিয়ে নেওয়া
হবে। ’( তিরমিজি)। এজন্য আরেম হওয়া জরুরি। কারণ আলেম গনেরাই একমাত্র
আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ এবং ভয় করে থাকে। উনারা ইলমে দীন অর্জন করে
থাকে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন যে, অর্জনকারী একজন
আলেমের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন তোমাদের মধ্যে যারা জানে (অর্থাৎ আলেম) আর যারা জানে না তারা উভয়ে কি এক সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার : ৭)। আলেম এবং সাধারণ মানুষ কখনো এক হতে পারে না। ইলমে দীনের কারণে আলম আর সাধারণ মানুষের মধ্যে বহু তফাৎ বিদ্যমান। আলমেদের মর্যাদার কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন,
আল্লাহতায়ালা আরও স্পষ্টভাবে আলেমদের মর্যাদার কথা তুলে ধরে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। ’ সুরা মুজাদালা : ১১।

আল্লাহতায়ালা অন্যত্র আরও ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যাকে চান হিকমত দান করেন। আর যাকে হিকমত দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দেওয়া (হয়েছে সুরা বাকারা) ২৬৯। ইলমে দীন অর্জনের জন্য যে যত কষ্ট করবে আল্লাহ তাকে তত সম্মানি করে তুলবেন। ইলমে দীনের এত গুরুত্ব।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম
শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ আসান করে দেন।’-সহীহ মুসলিম ২/৩৪৫। ইলমে দীনের জন্য রাস্তা বের হওয়া উচিৎ। এখানে রাস্তা বলতে দীনের পথকে বুঝানো হয়েছে। যদি কেহ ইলমে দীন হাসিলের জন্য রাস্তায় বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে। আরেক হাদীসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয় সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে” তিরমিজি ২/৯৩। সুতরাং ইলমে দীন অর্জন সম্পূর্ন আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জনের জন্য হাসিল করতে হবে।

লেখক : প্রবন্ধকার