সোমবার, ২৭শে আগস্ট, ২০১৮ ইং ১২ই ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

ফুটবলের জনপ্রিয়তা : প্রাসঙ্গিক কথা-আল আমীন শাহীন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়াম শুরু হয়েছে ২য় বিভাগ ফুটবল লীগ। সুন্দর মনোরম স্টেডিয়ামে খেলছে সরাইল ফুটবল একাডেমি আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ফুটবল একাডেমি। নতুন প্রজন্মের ফুবল তারকা অন্বেষণে এ লীগ খেলা শুরু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ফুটবল এসাসিয়েশনের আয়োজনে এই প্রথম। স্থানীয় নবীণ খেলোয়ারই খেলছে। আমি নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়ে সব সময়ই স্মৃতিতে হারিয়ে যাই। মাঠ ভরা দর্র্শক, টিকেট কেটে মাঠে প্রবেশ, টিকেট নিশ্চিত করতে আয়োজদের টিনের বেড়া ফাঁক দিয়ে আর দেয়াল ডিঙ্গিয়ে মাঠে প্রবেশের নানা ঘটনা। এ মাঠে জাতীয় তারকা সালাউদ্দিন,চুন্নু,আনোয়ার,মন্টু আমাদের ওসি ভাই, তামান্নাভাই,সুনীল স্যার, প্রদীপ মামা ,ইউসুফ ভাই মহিমভাই সবার নাম লিখতে গেলে জায়গা হবে না, তাদের খেলা দেখেছি।আব্বা ক্রীড়ামোদী ছিলেন উনার সাথে একই রিক্সায় চড়ে খেলা দেখতে মাঠে আসতাম তখন।

মাঠের মাঝে চিনে বাদামের গন্ধ, মাঠ ভরা দর্র্শকদের আনন্দ উল্লাস, মাঠের পূর্বদিকে ছিল পুকুর, এর পাড়ের গাছের ডালে চড়ে বসে দর্শকদের খেলা দেখার বিষয়টিতে খুব মজা পেতাম। খেলা শেসে বেশ কবার পাশের পুকুরে গোসল করে পানি ভেজা শরীরে বাড়ি ফিরেছি। এখন প্রশ্ন এ মাঠের দর্শক গেল কোথায়? উত্তর না পেয়ে মনভরা দীর্ঘশ্বাস বেরুলো। পাশে অগ্রজ সাংবাদিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আরজু ভাই। তিনি কথা বলছিলেন পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবিরের সাথে, আমারই মতো স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন। কথায় কথায় হঠাৎ তিনি বল্লেন, মাঠে দর্শক বাড়াতে পৌর সভার ওয়ার্ড ভিত্তিক একটি ট’র্ণামেন্ট দেয়া যায় কিনা। বল্লাম চমৎকার প্রস্তাব।

প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন খান,জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী মন্টু ভাই, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাড,ইউসুফ কবীর ফারুক ভাই খেলা দেখছিলেন মনোযোগ দিয়ে, নবীন খেলোয়ারদের ক্রীড়নৈপুন্যে খুশী হলেও সকলেই হতাশ দর্শক সমর্থক নিয়ে। জেলা প্রশাসক মহোদয় সহ সবাইকে একটু জোরগলায় বল্লাম পৌরসভার ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিযোগিতার প্রস্তাবের কথা, উনারা সবাই তাকালেন, মৃদৃ সমর্থন সবার মাঝেই লক্ষ করা গেল। জেলা প্রশাসক মহোদয় বল্লেন, বিশ্বকাপ ফুটবলে আমাদের দেশে সমর্থক উন্মাদনার কথা, এই উন্মাদনা কাজে লাগিয়ে হোক অথবা যে কোন ভাবেই হোক দর্র্শক বাড়াতে তিনি গুরুত্বারোপ করলেন।তিনি নতুন প্রজন্মকে মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে এবং তাদের সুস্থ সবল স্বাস্থ্যের জন্য ফুটবল খেলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, তরুণদের মাঠে আনতে হবে।

তিনি বর্তমান সরকারের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ এর কথা তুলে ধরে বল্লেন , উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে তবু আশানুরূপ দর্শক নেই। তিনি এ ব্যাপারে সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান। পুলিশ সুপার মহোদয় বল্লেন ফুটবলের উনার স্মৃতি কথা । প্রশ্ন করলেন, আসলে দর্শক আসছে না কেন এর কারণ চিহ্নিত করতে হবে। দিন দিন খেলার মাঠ পুকুর ভরাট, আবাসন বৃদ্ধি, আর অনলাইনে শিশু কিশোরদের আসক্তি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। মন্টু ভাই , ইউসুফ ভাই তুলে ধরলেন নানা স্মৃতি কথা। আমাদের সকলেরই ঐক্যমত মাঠে দর্র্শক আনতে সবাইকেই আন্তরিক ভ’মিকা পালন করতে হবে।

এর মাঝে দেখি প্রবীণ ফুটবলার ইয়াকুব ভাই ইদানিং আধ্যাত্মিক সাধনা করেন তবুও তিনি মাঠে, ফুটবল খেলোয়ার শাহীন মোল্লা সম্প্রতি অসুস্থ হয়েও মাঠে এসেছেন জার্সি পড়ে। হাটতে পারছেন না তবু সহযোগি রেফারী, শরীরের অসুস্থতা উপক্ষো করে তিনি মাঠে এসেছেন, এটাই মাঠের নেশা খেলার নেশা। মাঠের শুন্য গ্যালারীতে বেশ কিছু শিশু কিশোর ভীর করেছে। মাঝে মাঝে তাদের আনন্দ উল্লাস শুনছি, ভালই লাগলো এই নতুনদের আগ্রহ দেখে, নতুনদের আগ্রহ আছে বুঝা গেল , তাহলে কি আমরা অভিভাবক আর বড়রা মাঠের আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারছি না, এই প্রশ্ন মনে। এরি মাঝে ১-০ গোলে উদ্বোধনী খেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর একাডেমিকে হারিয়ে সরাইল একাডেমি জয়ী হয়েছে।

নিজে নিজেই আনন্দ ধ্বনী দিলাম, দেখি আমার চিৎকারে অন্যরাও ধ্বনীতে যোগ দিলেন। আসলে আগ্রহ থাকলেই আগ্রহ বাড়ে। খেলা শেষ, বিদায় বেলায় মনটু ভাই পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবীর মহোদয়কে বেশ জোড়ালো ভাবেই বল্লেন, পৌর সভা আয়োজনে মেয়র কাপ ফুটবল ট’র্ণামেন্ট দিতে। সঙ্গে আরজু ভাই, ইউসুফ ভাই, আমি সহ জোড়ালো দাবী জানালাম, মেয়র মহোদয়ের হাসি দেখে বুঝা গেল সম্মতি আছে, তিনি এ নিয়ে পৌর পরিষদে কথা বলবেন আশ্বাস দিলেন। আসলে আয়োজন যত বাড়বে, দর্শকও তত বাড়বে। মুল কথা ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।

খেলা নিয়ে সম্প্রতি আমার একটা লেখা পড়ে অনেকেই কাগজ পুটলী করে বল খেলা, জাম্বুরা দিয়ে বল খেলা, পাড়ায় পাড়ায় মাঠে ক্ষেতে বল খেলা সহ শৈশব কৈশোরের নানা স্মৃতি তুলে ধরেছেন। সেই স্মৃতিকে আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদের সন্তানদের অনলাইন নেশা থেকে রক্ষা করতে সকলেরই এই আন্তরিকতা এখন সময়েরই দাবী।
—————————————————————————————
লেখক : সিনিয়র সহ সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, সম্পাদক নতুন মাত্রা।