মঙ্গলবার, ২৮শে আগস্ট, ২০১৮ ইং ১৩ই ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যে সায়, নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা খালেদা জিয়ার

নির্বাচন, আন্দোলন, জোটের অখন্ডতা ও জোটের বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বড় ঐক্য গড়ার বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে ডেকে নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্র এসব কথা জানা গেছে ।

কারাবন্দি হওয়ার পর গত শনিবার দলের মহাসচিবকে হঠ্যাৎ কারাগারে ডেকে পাঠান খালেদা জিয়া। কারাগার থেকে চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারি আবদুস সাত্তারকে সাক্ষাতের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরার্মশ করে মির্জা ফখরুল কারাগারে সাক্ষাতের জন্য যান। কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রথম একা কথা বলার সুযোগ পেলেন বিএনপি মহাসচিব।

যদিও ওই সাক্ষাতের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন তাদের মধ্যে সাক্ষাতে রাজনৈতিক কোনো কথা হয়নি। তবে দলের সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় তাদের মধ্যকার আলাপের বিষয়টি নেতাদেরকে অভিহিত করেন। এছাড়া খালেদা- ফখরুলের আলোচনার বিষয়টি লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অভিহিত করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিবকে কোনো রাজনৈতিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, কিছু কিছু বিষয়ে তিনি (খালেদা জিয়া) পরার্মশ দিয়েছেন। যতটা বলা সম্ভব আপনাদেরকে বলবো। প্রতিটি দলের নিজস্ব কৌশল থাকে সেভাবেই দল পরিচালনা হয়।

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আমরা প্রায় সময় নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য বসি। শনিবার রাতেও আমরা বসেছি। সেখানে দলের প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসচিব ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাত করে এসে ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানালেন। আমরা জানলাম, তিনি অসুস্থ, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এরবাইরে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা নেই। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের ওই বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপি ওই বৈঠকে তিনি মহাসচিবকে ২০ দলীয় জোটের ঐক্য ধরে রেখে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বড় ঐক্য করার ব্যাপারে তার অবস্থান জানিয়ে দেন।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ক্রমশ উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এই উত্তাপ সেপ্টেম্বরে রাজপথে আসতে পারে এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে সরকারবিরোধী রাজনৈতি দলগুলো। বিএনপির পাশাপাশি এসব রাজনৈতিক দল ও জোট একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সেপ্টম্বরের মাঝামাঝি থেকে নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবে। ইতিমধ্যে বামদলগুলো তাদের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক মাঠে অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছে দলটির নেতার। দলের মনোনয়ন চ’ড়ান্ত করে প্রার্থীদের স্ব স্ব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামানো হবে। আর সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করেছে। এই দুই দলের পাশাপাশি শক্তি দেখাতে মাঠে নামবে বাম দল, ইসলামি দল এবং অন্য ছোট রাজনৈতিক দলগুলো।

এছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজার নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট এবং বৃহত্তর ঐক্য গড়ার অংশ হিসেবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। একই সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি পালন করবেন ৮টি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। তবে এখনো পর্যন্ত সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক প্লার্টফর্মে আসতে পারেনি। তবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়ায় জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যমতের একটা সূচনা প্রকাশ্যে আসতে পারে। বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে দলগুলোর শীর্ষনেতাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনো পর্দার অন্তরালে।

বৃহত্তর ঐক্যর প্রধান বাধা বিএনপির শরিকদল জামায়াত। সেই বাধা পেরিয়ে দেশের প্রয়োজনে, একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার আলোচনা চলছে। এই ঐক্য হলে তা হবে সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক জোট।