জাতিসংঘের সিডিসির সদস্য হলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ‘বিশ্বব্যাপি বাণিজ্য যুদ্ধে উন্নতদেশগুলোর নীতি বিপন্ন হচ্ছে’
অর্থনীতিবিদ ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিশ্বব্যাপি যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে উন্নতদেশগুলোর নীতি ও মনযোগ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক মানবিক অর্থায়নের নীতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘে আমার প্রধানকাজ হবে যারা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেড় হওয়া চেষ্টা করছে তাদের দিকে বেশি মনযোগ দেয়। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি)-এর সদস্য নিযুক্ত হওয়ার পর আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে টেলিফোনে এসব কথা বলেন তিনি।
উল্লেখ্য,জাতিসংঘের মহাসচিবের সুপারিশে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসক)-এর সাম্প্রতিক অধিবেশনে সিডিপির সদস্য হিসেবে ড. দেবপ্রিয়কে সিডিপির সদস্য হিসাবে ৩ বছরের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে। আগামী বছরের ১ জানুয়ারিতে তিনি দ্বায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়েছেন।
ড.দেবপ্রিয় বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম আর্থ-সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের আগে বাংলাদেশ থেকে এই কমিটিতে আরো ৪ জন অর্থনীতিবিদ সদস্য ছিলেন। উনারা হলেন, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর নুরুল ইসলাম, প্রফেসর রেহমান সোবহান এবং প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ড. দেবপ্রিয় কমিটির সদস্য হিসাবে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার আগে বাংলাদেশের আরো ৪ জন অর্তনীতিবিদ কাজ করেছেন। আমি এমন এক সময়ে দ্বায়িত্ব নিচ্ছি যখন বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে আরো অনেকগুলো দেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই ট্রানজিশনের সময়টা খুবই সমস্যাপূর্ণ হয়। আমার কাজ হবে এসব ক্ষেত্রে স্বল্পোউন্নত দেশগুলোকে সহায়তা করা। সামগ্রীকভাবে উন্নতদেশগুলোর সহায়তা এই সময়ে যাতে অব্যাহত থাকে সেবিষয়ে সুপারিশ করবো।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডিপি জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান যা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের অনুকল্পে উন্নয়ন সহযোগিতা সম্পর্কিত নীতি পরামর্শ দিয়ে থাকে। প্রতি তিন বছর পরপর সিডিপি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা পর্যালোচনা করে থাকে এবং এই তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং তালিকা থেকে বের হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন দেশ চিহ্নিত করে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নতুন কয়েকটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি অভিবাসন সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তেনে বিশ্বব্যাপি উষ্ণায়নের সমস্যা,শুল্কায়নের সমস্যা, বিশ্ববাণিঝ্যে ভারসাম্যহীনতার সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ের সঙ্গে স্বল্পোউন্নত দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অভিবাসি ক্যাম্প রয়েছে। দেশটি উষ্ণায়নের সম্যসাতেও রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবাই এসব সমস্যায় রয়েছে। সেখানে যাতে উন্নতদেশগুলোর অর্থায়নের নীতি সংকুচিত না হয় সেটিও ভাবতে হবে।
উল্লেখ্য সিডিপি স্বল্পোন্নত দেশ চিহ্নিত করার সূচকগুলো পুনর্বিবেচনা করছে। এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়া দেশগুলো কি সাহায্য দেয়া যায় তাও আলোচনা করছে। একই সঙ্গে সংস্থাটি ২০২৪ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের সামগ্রিক অগ্রগতিও পর্যালোচনা করবে।
ড. দেবপ্রিয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ। জাতিসংঘসহ জেনেভা ও ভিয়েনায় অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জেনেভায় জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের সমন্বয়ক ছিলেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বহু উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশের পক্ষে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আঙ্কটাড মহাসচিবের স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন এবং ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশসমূহের চতুর্থ সম্মেলন প্রস্তুতিতে অবদান রেখেছেন।
তিনি আঙ্কটাড গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ড. দেবপ্রিয় দুটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এলডিসি ফোর মনিটর এবং সাউদার্ন ভয়েস অন এসডিজির সভাপতি।