আ. লীগের টার্গেট ২৩০ আসন: জনপ্রিয় প্রার্থীদের সেপ্টেম্বরে গ্রিন সিগন্যাল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরীক দলগুলোকে ৭০ আসন ছেড়ে দিয়ে বাকি ২৩০ আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টির কাছে ৫০ থেকে ৬০টি আসন ছাড়বে। বাকি আসন ১৪ দলের শরিক প্রার্থীদের দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে এককভাবে আওয়ামী লীগ ২০০ আসনে জয়ী হতে চায়। জানা গেছে, নানা সংস্থার মাধ্যমে কয়েক দফা জরিপের কাজ শেষ করে আসনের জনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকা দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করেছেন। আগামী সেপ্টেম্বরেই জনপ্রিয় এসব প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ২৮ জানুয়ারির আগেই একাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করতে হবে।
সূত্র জানায়, বিগত ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১. ২০০৮-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনে ফলাফলকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনি গবেষকরা গুরুত্ব দিয়েছেন। এই চারটি জাতীয় নির্বাচনে যেসব আসন থেকে অন্তত দুই বার আওয়ামী লীগের জয় হয়েছে, গবেষকেরা মনে করছেন এসব আসনে আওয়ামী লীগের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন এসব আসনে জনপ্রিয় যোগ্য প্রার্থী দিলে আসনগুলো জয় লাভ করা সহজ হবে। নিরপেক্ষ ভোটের আয়োজন করেও এককভাবে ২০০ আসন পাওয়া সম্ভব। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টিকে সর্বোচ্চ আসন ছাড়তে পারে। তবে নির্ধারিত ২৩০ আসনের কোনো আসনই জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। সূত্র জানায়, ৬০টি নির্বাচনি আসন রয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টি সহজে জয়লাভ করতে পারে। অতীতের ভোটের হিসাবে দেখা গেছে, রংপুর সিলেট রাজশাহী বিভাগ কেন্দ্রিক এসব আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ হলে বিএনপির পরাজয় বেশ নিশ্চিত হয়। তবে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিএনপি জয়লাভ করার সুযোগ থাকে। মূলত এসব আসনেই আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে। বিএনপি যাতে ভোটের অংকের হিসাবে কোনো সুযোগ না পায়। তবে ১৪ দলের শরিকদের বিগত জাতীয় সংসদে প্রাপ্ত সিট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে ।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপ থেকে দেখা গেছে, প্রায় শতাধিক আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যরা নানা কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অনেক সংসদ সদস্য গণমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এসব সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাচ্ছেন না । এসব আসনে জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থীরা নির্বাচনি আসনে জনপ্রিয় হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। দলীয় সভানেত্রীর কাছে সকল তথ্য রয়েছে। তিনি যোগ্য জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দিবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যাদের কর্মকা-ের কারণে দলের ভাবমূর্তি বিগত দিনে নষ্ট হয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত তরুণ স্বচ্ছ নেতাদেরই গুরুত্ব দেওয়া হবে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অবশ্যই দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। জনপ্রিয় প্রার্থীদের দ্রুতই গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। অক্টোবরে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদপূর্তির তিন মাস আগে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাংবিধানিক বিধান রয়েছে।