মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে
নিউজ ডেস্ক: মালয়েশিয়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সেদেশে বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। এই ঘোষণায় বাংলাদেশের শ্রমবাজারে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
তবে এটিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে এ খাতকে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
‘একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে’- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের সূত্র ধরে রবিবার (২৬ আগস্ট ২০১৮) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্তের খবরে আমরা একদিকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, অন্যদিকে জনশক্তি রফতানিতে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেটভিত্তিক অনৈতিক ব্যবসা বন্ধে মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাই। কারণ মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে পুনরায় অভিবাসী কর্মী পাঠানোর পথ সুগম হয়েছে। তবে এটাও পরিস্কার যে এ সুযোগ গ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরো খাতকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করা এবং যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’
‘আমরা ব্যবসাটিকে বাংলাদেশের সব এজেন্টদের জন্য খুলে দিতে চাই’- গণমাধ্যমে প্রকাশিত মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন নিশ্চিত করার টিআইবির দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে টিআইবির আশঙ্কাই সত্য প্রতীয়মান হলো।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত টিআইবির একটি গবেষণাতে (গবেষণাটি দেখতে ক্লিক করুন) বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে অভিবাসী কর্মী পাঠনোর একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন ও গ্রাহকদের শোষণ প্রক্রিয়া রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করে সরকারকে একটি পলিসি ব্রিফ (এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন) করে টিআইবি। যার আলোকে যথাসময়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গৃহিত হলে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ বন্ধের মত এ ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিবাসী কর্মীনিয়োগ বন্ধের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট স্বল্পতম সময়সীমার মধ্যেঅভিবাসী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে। উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ব্যয় নির্ধারণ করে পুনরায় শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বাংলাদেশকেই এগিয়ে আসতে হবে। না হলে বিশাল এ শ্রমবাজার স্থায়ীভাবে বন্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি হবে, যা ক্রমবর্ধিষ্ণু বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির জন্য সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ রেমিটেন্স অর্জন বাধাগ্রস্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, টিআইবি উদ্বিগ্ন বিশেষ করে এ কারণে যে যে সিন্ডিকেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার কর্ণধাররা এবং তাদের কার্যক্রম ও প্রভাব সম্পর্কে সরকারের অবগত না থাকার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পেরেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে এখন সুযোগ এসেছে অভিবাসন খাতকে সিন্ডিকেট ও যোগসাজশের দুর্নীতির গ্রাস থেকে মুক্ত করার। তাই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বদিচ্ছা প্রমাণের এখনই সুযোগ বলে মনে করে টিআইবি। সূত্র: কালের কণ্ঠ