খালেদা জিয়ার মুক্তি কত দূর?
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি মামলায় একে একে জামিন হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তবে তার মুক্তি নিয়ে এখনো ধোয়াশা কাটছে না। এরইমধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দুটি ঈদ পার করতে হয়েছে কারাগারে। আর কয়েকমাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে তার মুক্তি নিয়েও নেতা-কর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে হতাশা।
বিএনপির হাই কমান্ড বলছে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, কেবল দুটি মামলায় জামিন না হওয়ায় মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার। জামিন না হওয়া দুটি মামলাই কুমিল্লার আদালতে বিচারাধীন।
এদিকে কুমিল্লার মামলায় জামিনের বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, খালি ঘোরাচ্ছে। এক মামলায় শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করলেও অপর মামলার নথি তলব করেছেন আদালত। তবে বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেপ্টেম্বরেও খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব না বলে জানান সানাউল্লাহ মিয়া।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী একেএম এহসানুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, কুমিল্লার আদালতে দুই মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা ও অপরটি নাশকতার মামলা।
তিনি জানান, নাশকতা মামলায় জামিন শুনানি করতে আগামী ৩০ আগস্ট দিন ধার্য করে দিয়েছেন কুমিল্লার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক একেএম শামসুল হক। গত ২০ আগস্ট আদালত এ দিন ধার্য করে দেন। ওই আদালতে শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর হলে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে।
এছাড়া হত্যা মামলায় শুনানির জন্য এখনো দিন ধার্য হয়নি। তবে হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে দায়রা জজ আদালতে আবেদন করতে হবে। সেখানেও জামিন নামঞ্জুর হলে তবেই হাইকোর্টে আবেদন করা যাবে বলে জানান এহ্সানুর রহমান।
এর আগে কুমিল্লায় নাশকতা ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন আবেদনটি এক সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে গত ১৩ আগস্ট নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। এর ফলে এই মামলায় এর আগে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া ছয় মাসের জামিন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল হয়ে গেছে বলে জানান আইনজীবীরা।
অপরদিকে কুমিল্লার হত্যা মামলায় জামিন শুনানি শেষে নট প্রেস রিজেক্ট (উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ) করেছেন হাইকোর্ট। গত ৬ আগস্ট আদালত এ আদেশ দেন। অবশ্য শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী খারিজের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
এদিকে নড়াইল ও ঢাকার মানহানী মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে এরইমধ্যে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী ৩০ আগস্ট এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নড়াইলে দায়ের করা মানহানির ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। গত ১৩ আগস্ট বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের বেঞ্চ ওই জামিন দেন। এছাড়া ঢাকার মানহানী মামলায়ও ১৪ আগস্ট ৬ মাসের জামিন দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদ- হয়। এরপর থেকেই কারাগারে রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।