অনলাইন ডেস্ক : বিয়ের পাত্র-পাত্রী তৈরি৷ নির্দিষ্ট সময়ে নিয়পম-কানুন মেনেই হল বিয়ে৷ কিন্তু এটি কোন সাধারণ বিয়ে ছিলনা। কারণ বিয়েটা মানুষের হয়নি, হয়েছে গরুর৷ তবে এটা কোনও কুসংস্কার ছিলনা। এই বিয়ের কারণ হল বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসা এক লোকউৎসব৷ এই উৎসবের নাম ‘বাঁদনা পরব’৷ তারই প্রধান অংশ ছিল এই ‘গরুর বিয়ে’৷ শতাব্দীকাল ধরে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন ভারতের হীড়বাঁধের বনকাটা গ্রামের বাঁকুড়াবাসী।
প্রতি বছরই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার আগের দিন লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়৷ সোমবার ‘গরুর বিয়ে’ উপলক্ষে গরুকে ছোপানো হল বিভিন্ন রঙে৷ সাজিয়ে তোলা হল নানাভাবে৷ কোথাও আবার গরুর পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে, কোথাও আবার গরুর মাথায় রঙিন ফিতে বেঁধে সাজিয়ে তোলা হল৷
ভারতের হীড়বাঁধের বনকাটা গ্রামের শিবদাস বাউরি ও ভোজদা গ্রামের লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এই উৎসব গ্রামে পালিত হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে বেশ কিছু লোকাচারও জড়িয়ে আসছে৷ আমরা ছোটবেলা থেকেই তা একই রকমভাবে দেখে আসছি৷”
প্রযুক্তির দুনিয়ায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উৎসবের রকমফের ঘটলেও গ্রামবাংলার প্রাচীন লোকাচার হিসাবে এই অনুষ্ঠানটির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি৷ শতাব্দীকাল ধরে এই নিয়মে অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন স্থানীয় মানুষজন৷ তবে গরুকে যে ভাবেই সাজিয়ে তোলা হোক না কেন, ধান দিয়ে একটি বিশেষ মুকুট তৈরি করা এদিন বাধ্যতামূলক৷ একে ‘মোড়’ বলা হয়৷ জমি থেকে কতকগুলি পাকা ধানের শিষ এনে তা দিয়ে সুদৃশ্য ‘মোড়’ তৈরি করা হয়৷ পরে সেটি গরুর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয়৷
বিশেষত সন্ধের সময় এই অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়৷ কারণ, সকাল থেকেই বাড়ির মূল দরজা থেকে গোয়ালঘর পর্যন্ত আলপনা দিয়ে রাখেন বাড়ির বউ-মেয়েরা৷ এরপর ঘরের দুয়ারে কিছু ঘাস দিয়ে রাখা হয়৷ সন্ধের সময় গরুর দল মাঠ থেকে ঘরে ফিরে এলে প্রথমে তাকে রং দিয়ে সারা গায়ে ছাপ দেওয়া হয়৷ তার পর সেই ঘাস খেয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে তারা৷
সন্ধের সময় গোবর দিয়ে একটি যমরাজের কাল্পনিক মূর্তি তৈরি করে দুয়ারে রাখা হয়৷ তার উপর একটি প্রদীপ জ্বেলে দেওয়া হয়৷ সেই প্রদীপের উপর পা দিয়ে আগুন নিভিয়ে গোয়ালঘরে ঢোকে গরুর দল৷ এর পর বিভিন্ন ভাবে বন্দনা করা হয়৷ তাই ‘বন্দনা’ শব্দ থেকেও এই উৎসবের নামকরণ হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেছেন৷
বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি গবেষক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটি গ্রামবাংলার একটি অতি প্রাচীন লোকউৎসব৷ গবাদি পশু হিসাবে গরু আলাদা গুরুত্ব দিতেই এই অনুষ্ঠানের প্রচলন তৎকালীন সময়ে হয়েছিল৷ আজও একইভাবে সমান গুরুত্বের সঙ্গে তা পালিত হয়ে আসছে৷”