নিজস্ব প্রতিবেদক : এক, দুই, পাঁচ পয়সা আর দশ পয়সার পর দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেছে সিকি-আধুলিও। সিকি মানে ২৫ পয়সা, আর আধুলি মানে ৫০ পয়সার মুদ্রা। কিন্তু এই দুটো মুদ্রা এখন ইতিহাসের বাসিন্দা। এক টাকার কয়েনেরও যায় যায় অবস্থা। তবে বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই ও পাঁচ টাকার কয়েন। শোনা যাচ্ছে, সরকার শিগগির বাজারে আনছে দশ টাকার কয়েন।
কয়েকবছর আগেও সিকি আধুলিতেই পাওয়া যেত শখের লজেন্স, বাদাম, নানা পদের আচার। ছোট ছোট লেনেদনগুলোও সারা যেত সিকি-আধুলিতেই। অথচ মূল্যস্ফীতির ক্রমাগত চাপে হারিয়ে গেছে এক সময়ের প্রতিদিনকার সঙ্গী ১, ৫, ১০ পয়সার মুদ্রাসহ সিকি আধুলি।
হারিয়ে যাওয়া সিকি আধুলি ও কয়েনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরুপাক্ষ পাল বলেন, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা- এগুলো এখন আবর্জনা। মূল্যস্ফীতির চাপে এগুলোর কোনো মান নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে ২৫ সেন্ট মানে আমাদের ২০ টাকা। ২৫ সেন্টের দুটো কয়েন দিয়ে ওখানে একটা ডোনাট (এক ধরনের ফার্স্ট ফুড) কিনে খাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে ৫০ পয়সা দিয়ে এটা সম্ভব না। উন্নত বিশ্বের ২৫ পয়সা আর আমাদের ২৫ পয়সার মান এক না। সেজন্য উন্নত বিশ্বে এখনও সিকি আধুলির ব্যবহার জনপ্রিয়।
কয়েনের ব্যবহার হ্রাসের অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেকেই ক্রেডিট কার্ড নির্ভর হয়ে গেছে। তারা এক মাসেও মুদ্রা কি জিনিস দেখে না। মুদ্রার কোনো স্পর্শ ছাড়াই তারা লেনদেন করে। এ কারণেও বাংলাদেশে কয়েনের ব্যবহার কমেছে। সুতরাং দেশে ডিজিটালাইজেশন যত বেশি হবে তত কয়েন ও কাগুজে মুদ্রার প্রয়োজন কমে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, সামনের দিনগুলোতে লেনদেনের আরো নতুন নতুন ক্ষেত্র আসবে। যেমন- সেলফোনে পেমেন্ট। এ ক্ষেত্রে স্ক্যান করে পেমেন্ট দেবে। তাই কয়েনের ব্যবহার আরো কমার শঙ্কা আছে। ১ ও ২ টাকার কয়েনের ব্যবহার অধিকাংশে কমেছে। আর সিকি আধুলির ব্যবহার তো সেই কবে থেকেই হারিয়ে গেছে। এটা হয়েছে আসলে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাজারে বর্তমানে যেসব পুরনো ধাতব মুদ্রা রয়েছে; এগুলো অচল করার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। এগুলো অচল করতে হলে পুরো মুদ্রা আইন পরিবর্তন করতে হবে। আর তা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। এজন্য ১, ৫, ১০ ২৫ ও ৫০ পয়সার কয়েনগুলো এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অচল করা সম্ভব হয়নি। তবে এগুলো অনেক আগেই ব্যবহারিকভাবে অচল হয়ে গেছে। বাজারে এগুলোর এখন কোনো বিনিময় মূল্য নেই বললেই চলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন মতে, প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে ব্যাংক নোটের মূল্যমান হচ্ছে ৯২ হাজার ৩৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সরকারি মুদ্রার মূল্যমান হচ্ছে ৭৯৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, বাজারে ১, ৫ ও ১০ পয়সার যে ধাতব মুদ্রা চালু রয়েছে, সরকার এগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেনি। ২৫ ও ৫০ পয়সার ধাতব মুদ্রাও আজকাল তেমন দেখা যায় না। এমনকি এক টাকার নোটও দিন দিন বিরল হয়ে যাচ্ছে।
দেশের ব্যাংক নোট বা ব্যাংক মুদ্রা হচ্ছে ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটগুলো। এগুলো বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকার নোট ও ধাতব মুদ্রা হচ্ছে সরকারি মুদ্রা। এগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় বের করে।