এ বছরটিই বোধ হয় টি-টোয়েন্টির বছর। বছরের শুরুটা হলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চারটি টি-টোয়েন্টি দিয়ে। এরপর প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলা হলো টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। মার্চ-এপ্রিলে চলল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এরপর বাংলাদেশ কিছুদিন বিশ্রাম পেলেও বিশ্বজুড়ে কিন্তু টি-টোয়েন্টি থেমে থাকেনি। একের পর এক টি-টোয়েন্টি লিগে হয়েছে এ বছর—আইপিএল, পিএসএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশ, ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি। টি-টোয়েন্টিময় এক বছরের সমাপ্তি টানছে বিপিএল।
বিপিএলের চতুর্থ সংস্করণে এবার খেলছে সাতটি দল। এবারই প্রথম সব দলই শক্তিমত্তায় প্রায় কাছাকাছি। প্লেয়ার ড্রাফট পদ্ধতিতে সব দলই সমান সুযোগ পাওয়ায় দল গুছিয়ে নিতে পেরেছে মোটামুটি সবাই। তবু দলগুলোর খেলোয়াড় তালিকা দেখে কোনো দলকে একটু এগিয়ে রাখতে হচ্ছে, কেউ–বা একটু পিছিয়ে আছে।
চিটাগং ভাইকিংস : তামিম ইকবাল, ক্রিস গেইল, ডোয়াইন স্মিথ—এই টপ অর্ডার দেখে যেকোনো দলের বোলিং লাইনআপই ভয় পাবে। এনামুল হক ও জহুরুল ইসলাম আছেন দলে। আর চমক হয়ে উঠতে পারেন উইকেটকিপার জাকির হাসান। সে সঙ্গে অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন শোয়েব মালিক, গ্র্যান্ট এলিয়ট, মোহাম্মদ নবী কিংবা জীবন মেন্ডিস। তাসকিন আহমেদ, শুভাশিস রায় ও ইংল্যান্ডের টাইমল মিলসের হাতে থাকছে পেস বোলিংয়ের দায়িত্ব। তবে দলের স্পিন বোলিংটাও দুর্দান্ত—শ্রীলঙ্কার চতুরঙ্গ ডি সিলভা, বাংলাদেশের আবদুর রাজ্জাক, সাকলায়েন সজীব ও লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন আছেন দলে।
এমন গোছানো দল নিয়ে প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখতেই পারে চট্টগ্রামের দলটি। অন্তত কাগজে-কলমে সবচেয়ে এগিয়ে চিটাগং ভাইকিংসই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ভিক্টোরিয়ানদের এগিয়ে রাখতে হচ্ছে শুধু একটি কারণেই, এ দলের নেতৃত্ব মাশরাফি বিন মুর্তজার কাঁধে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল নিয়েও গত বছর মাশরাফির দারুণ অধিনায়কত্বই নিশ্চিত করেছিল দলটির শিরোপা জয়। এবার অবশ্য শক্তিশালী দলই গড়েছে কুমিল্লা। তবে দলটির শক্তির জায়গা তাঁদের পাকিস্তানি ‘রিক্রুট’। দলে মোট ছয়জন পাকিস্তানি। গতবারের টুর্নামেন্ট-সেরা আসহার জাইদিকে ধরে রেখেছে কুমিল্লা। তবে এবার তাঁদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খান। ব্যাটিংয়ে অবশ্য স্থানীয় ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, আল আমিন ও নাজমুল হোসেনের ওপরই ভরসা রাখছে দলটি। আর পেস বোলিংয়ে মাশরাফির সঙ্গী সোহেল তানভীর ও নুয়ান কুলাসেকারা।
কুমিল্লা তাই দলীয় শক্তিতে থাকছে দুই নম্বরে।
বরিশাল বুলস : বরিশালের এবারের পেস আক্রমণ যেকোনো দলকেই ঈর্ষায় ফেলবে। আল আমিন হোসেন, আবু হায়দার, কামরুল ইসলাম, থিসারা পেরেরা, কার্লোস ব্রাফেট, রায়াদ এমরিত—একগাদা পেসার কিংবা পেস বোলিং অলরাউন্ডার দলটিতে। সে তুলনায় স্পিনে একটু ঘাটতি আছে দলে। শুধু তাইজুল ইসলাম, দিলশান মুনাবীরা ও মোহাম্মদ নওয়াজই আছেন স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে। ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, শাহরিয়ার নাফীস, শামসুর রহমান ও জশুয়া কবই ভরসা। এই খেলোয়াড়দের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বরিশাল ফেবারিটদের মধ্যেই থাকবে। কাগজে-কলমে আপাতত তিনেই রাখা হচ্ছে দলটিকে।
ঢাকা ডায়নামাইটস : কাগজে-কলমে ডাকা ডায়নামাইটসই সবচেয়ে এগিয়ে থাকার কথা ছিল। সাকিব আল হাসান, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে খেলছেন এক দলে! সে সঙ্গে দেশের অন্যতম সেরা দুই অলরাউন্ডার নাসির হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন। সমস্যাটি হলো দলের ফায়ার পাওয়ার হিসেবে থাকা এভিন লুইস, আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্রাভো সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। জিম্বাবুয়েতে ত্রিদেশীয় সিরিজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন এঁরা সবাই। ২৫ নভেম্বরের আগে তাঁদের পাওয়ার সুযোগ খুব কম ঢাকা ডায়নামাইটসের। মোহাম্মদ শহীদ, ওয়েইন পারনেল ও রবি বোপারাতেই আপাতত ভরসা রাখতে হচ্ছে তাদের। আর লেগ স্পিনার তানভীর হায়দারও চমক দেখাতে পারেন।
দলের বিদেশিদের পূর্ণ সময়জুড়ে না পাওয়ায় ঢাকাকে তাই চারে রাখতে হচ্ছে।
রাজশাহী কিংস : ২০১৫ সালে অনুপস্থিত ছিল রাজশাহী। নতুন নামে ভালো দল গড়েছে তারা। আইকন সাব্বির রহমান, ড্যারেন স্যামি, উপুল থারাঙ্গাদের নিয়ে ব্যাটিং লাইনআপটা ভালো। রনি তালুকদার, মুমিনুল হক, রকিবুল হাসান ও উমর আকমালরাও আছেন এই দলে। তবে রাজশাহীর ম্যাচে নজর থাকবে দুজনের দিকেই—মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইবাদত হোসেন। এই দুই তরুণ এবারের বিপিএল মাতাতে পারেন ব্যাটে-বলে। পেস বোলিংয়ের মূল দায়িত্ব অবশ্য ইবাদত নয়, থাকবে মোহাম্মদ সামি ও আবুল হাসানের হাতে।
খুলনা টাইটানস : মাহমুদউল্লাহ, কেভন কুপার, লেন্ডল সিমন্সদের নিয়ে গোছানো দলই গড়েছে খুলনা। কিন্তু ঢাকার মতো তাদেরও সমস্যা ফেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সূচি। দলের টপ অর্ডারে ক্যারিবীয় দলের আন্দ্রে ফ্লেচারও যে আছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নজরকাড়া নিকোলাস পুরানও আছে এ দলে। দেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে শুভাগত হোম ও অলক কাপালিতেই শুধু ভরসা রাখা যাচ্ছে। পেস বোলিংয়ে আছেন পাকিস্তানি জুনায়েদ খান ও অস্ট্রেলিয়ার বেন লাফলিন। তবে স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে বিগ হিটার হাসানুজ্জামান আলো কেড়ে নিতে পারেন।
রংপুর রাইডার্স : রাইডার্স দলটি দেখে চোখ কপালে উঠতেই পারে। মোহাম্মদ শেহজাদ, শারজিল খান, নাসির জামশেদ, শহীদ আফ্রিদি, সৌম্য সরকার—এঁদের সবার মধ্যেই একটা মিল আছে। সবাই অতি-আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং লাইনআপের সবাই একধরনের হওয়াটাই দলটিকে পিছিয়ে দিচ্ছে অন্যদের থেকে। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নজরকাড়া দুই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের পিনাক ঘোষ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের গিডরন পোপও কিন্তু ওই ধরনের ব্যাটসম্যান। অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমানও তাই। তবে রুবেল হোসেন, সোহাগ গাজী ও আরাফাত সানিকে নিয়ে বোলিংটা ভালোই সাজিয়েছে রংপুর। বাবর আজম ও সচিত্রা সেনানায়েকেও থাকবেন বোলিংয়ে।
কিন্তু ব্যাটিংয়ে বৈচিত্র্যহীনতা রংপুরকে সবার শেষেই রাখতে হচ্ছে!