গোপালগঞ্জে কেমন আছে হলি আর্টিজানে নিহত ওসি সালাউদ্দীনের পরিবার
পীড়াদায়ক সেই বিভীষিকাময় স্মৃতি ভুলে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে ওসি সালাউদ্দীনের পরিবার। বহমান সময়ের স্রোতে পীড়াদায়ক ওই স্মৃতি ভুলে এখন অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে গেছে ওসি সালাউদ্দীনের পরিবার। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে নিহত হন ওসি সালাউদ্দীন । সন্ত্রাসীরা কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা ব্যাংকে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে সিনেমা বা নাটকে এ ধরণের দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু এ ধরনের হামলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার বাস্তব চিত্র দেখা গেছে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঘটে যাওয়া ওই হামলার পরই জিম্মি সংকটের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারে দেশবাসী। আতঙ্ক ও শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা জাতি। ভয়াবহ ওই হামলার দুই বছর পূর্ণ হয় রোববার। ঠিক এমন সময় জাতির জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে নিহত হন গোপালগঞ্জের সন্তান ওসি সালাউদ্দীন লুই। ওসি সালাউদ্দিনকে গোপালগঞ্জের মানুষ লুই নামে বেশি চিনে। সে একজন ভালো, পরোপকারী মানুষ হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি। সেই মানুষটি এতো তাড়াতাড়ি সবাইকে ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা যেন কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
ওসি সালাউদ্দীনের পরিবারে এখন আর আর্থিক অসচ্ছলতা নেই। ওসি সালাউদ্দীনের স্ত্রী আর দুই কন্যা সন্তান থাকেন আমেরিকা। তারা বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী।
নিহত লুইয়ের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী খান বলেন, হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না। এনিয়ে কথা বলতে আপত্তি নেই। যদিও বারবার ওই দুর্বিষহ সময়টাকে স্মরণ আসলেই প্রচন্ড পীড়াদায়ক। ওই দিনটি আমরা মনে করতে চাই না। মর্মান্তিক ওই হামলার ধকল কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, আমার ভাই নিরীহ মানুষ বাঁচাতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। সে আমাদের কাছে বাবার সমতুল্য ছিলেন। আমাদের সব ভালো মন্দই তিনি দেখতেন। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করছি।
নিহত সালাউদ্ধীন লুইয়ের প্রতিবেশী ও গোপালগঞ্জ জেলা উদীচীর সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনা নিয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না। ওই দিনটি আমরা মনে করতে চাই না। ওই স্মৃতি খুবই পীড়াদায়ক। দিনটি মনে করলে এখনও মানসিক ভাবে ঠিক থাকতে পারি না। তিনি আরো বলেন, ওসি সালাহ উদ্দীন লুই একজন সাহসী পুলিশ অফিসার ছিলেন। আর এ কারণেই তাকে অকালে জীবন দিতে হয়েছে। এ জন্য শুধু গোপালগঞ্জ শহর নয়, সারা জেলাবাসী শোকে কাতর। আমরা এ হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার দাবি করছি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু বলেন, লুই একজন চৌকস ও স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের পুলিশ অফিসার ছিলেন। বিভিন্ন সময় সরকার উৎখাতের যড়ষন্ত্র প্রতিহত করতে তার ব্যাপক ভূমিকা ছিল। মানুষের বিপদ-আপদে সবার আগে এগিয়ে আসার চেষ্টা করতেন। বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণে সহযোগিতা করতেন। প্রতি বছর ঈদের সময় গরীব মানুষকে নতুন কাপড় ও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তাই একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তার এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ও তাদের মদদ দাতাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি করছি।
ওসি সালাউদ্দীন লুইর বাবার নাম আব্দুল মান্নান খান। তিনি গোপালগঞ্জ এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ৭ ভাই ৪ বোনের মধ্যে লুই ছিলেন পঞ্চম। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের কাছে ওসি লুই ছিলেন পিতৃ সমতুল্য। পুরো পরিবারটি তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্যের যাবতীয় খরচ তিনি চালাতেন। তাই তার অকাল মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলা চালিয়ে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। খবর পেয়ে জিম্মিদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে গোপালগঞ্জের সন্তান সালাউদ্দীন লুই। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় তিনিসহ নিহত হন ২০ জন, এর মধ্যে বিদেশি নাগরিক ১৭ জন। অভিযানে অংশ নেয়া ছয় জঙ্গিই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়।