উগ্রপন্থা কিংবা চরমপন্থার স্থান নেই ইসলামে
মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী ব্যক্তি বলতে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপনকারীকে বোঝায়। একজন মুসলিমের সৌন্দর্যই হলো তার ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা ও উদারতা। মধ্যমপন্থা অবলন্বনকারী ব্যক্তিরা সব কিছুতে ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। মধ্যমপন্থা অবলম্বনের মধ্যে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ রয়েছে।
আমাদের রাসূল (সা.) সব পরিবেশ-পরিস্থিতি ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করতেন। যার ফলে হজরত রাসূল (সা:)-এর যুগে মুসলমানরা সব ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতো। উগ্রতা, হিংস্রতা, অহঙ্কার ও ক্রোধ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মধ্যমপন্থা হলো ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে সাফল্য লাভের একমাত্র চাবিকাঠি। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে ‘এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যমপন্থী মানব দলে পরিণত করেছি, যেন তোমরা দুনিয়ার অন্য মানুষদের ওপর সাক্ষী হয়ে থাকতে পারো।’ (সূরা বাকারা: ১৪৩)
বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আতিথেয়তা ও উদারতার জন্য প্রশংসিত। মুসলমানেরা মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী সহনশীল জাতি। মুসলমানদের কাছে পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর লোকজন নিরাপদ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা এবং হাত থেকে সব মুসলমান নিরাপদ থাকে’ (বোখারি: ০৯)
উগ্রপন্থা কিংবা চরমপন্থা হলো শয়তানের পথ। আমাদের নিজেদের ধ্বংসের হাত থেতে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সবাইকে চরমপন্থা পরিহার করে চলতে হবে। শয়তান সবসময় মানুষকে মন্দ কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। শয়তানের অনুসারী ব্যক্তি-গোষ্ঠীরা মানুষের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লাগানোর জন্য সর্বদা চেষ্টা করে। তাই মানুষরূপী শয়তান সম্পর্কে মুমিনদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে দাখিল হও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শক্র’ (সূরা বাকারা : ২০৮)।
বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। প্রভাবশালীরা নীতি নৈতিকতা ভালোমন্দের বিচার বিশ্লেষণ করছে না। দুর্বলের ওপর সবলের দখল নির্যাতন হামলা মামলা অত্যাচার শোষণ জুলুম কোথাও থেমে নেই। মুসলমানের ঈমান আকিদা ঐতিহ্য ধ্বংস করতে মানুষরূপী শয়তান সদা সর্বদা তৎপর রয়েছে। আজ শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে কিছু সংখ্যক মুসলমান যুবক উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, যা মুসলমানের জন্য আশঙ্কার বিষয়। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত’ (সূরা মুনাফিকুন: ০৯)
দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সবাইকে মাত্রাতিরিক্ত ভোগবিলাস, হিংসা ও নিন্দা পরিহার করে চলতে হবে। আমাদের সবাইকে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে মধ্যমপন্থা অনুসরণ করতে হবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম’ (সূরা হুজরাত: ১১)
আজকাল পৃথিবীর সর্বত্রই দুর্বলেরা নির্যাতিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ের সব পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্বল নির্যাতিত ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে অবশ্যই মধ্যমপন্থার অনুসরণ করতে হবে। তা হলে নির্যাতিত দুর্বল ব্যক্তিদের বিজয় আসবে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, যদি মুমিন হয়ে থাকো তবে বিজয় তোমাদের হবেই’ (সূরা ইমরান: ১৩৯)