রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা
পাপন সরকার শুভ্র, রাজশাহী : শালারা তোরা এখানে কি করিস, তোদের কোনো কাম-কাজ নাই, এখান থেকে পালাও’ এসব হুমকি দিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল পৌনে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিগ্রহণের সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ৫- ৬ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার সকাল পৌনে দশটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মানবন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য গ্রন্থাগারের সামনে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমদ রুনুর নেতৃত্বে দলবেঁধে গ্রন্থাগারের সামনে আসেন ছাত্রলীগের ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মী।
সেখানে এসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন রকম গালিগালিজ করে। এসময় ছাত্রলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেয়। ব্যানার নিয়ে দুই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক অনন্ত আহসান ও নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভকে আক্রমণ করেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান সিনহা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব।
তারা আন্দোলনকারী এলোপাতারি লাঠি দিয়ে এবং চড় থাপ্পর ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আর অন্যদেরকে ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা কেউ গ্রন্থাগারের সামনে দিয়ে, কেউ গ্রন্থাগারের পেছন দিয়ে পালিয়ে যায়।
হামলার শিকার নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ শুভ বাংলাদেশ
প্রতিদিনকে জানান, ‘আমরা যখন মানববন্ধনে দাঁড়াতে শুরু করেছি তখন ছাত্রলীগ নামের কিছু সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা সেখান থেকে কোনো রকমভাবে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। তারা আমাদের ব্যানারও কেড়ে নিয়েছে। পালিয়ে না আসলে তারা হয়তো আমাদের খুন করে ফেলতো। আমরা এখন নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে আছি। আমাদের
শারিরীক অবস্থা ভাল না, অতিদ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।’
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কাউকে হামলা করিনি। আমরা এমনিতেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। এটা দেখেই আন্দোলনকারীরা ভয়ে পালিয়ে গেছে।’
এদিকে আজ আন্দোলন শুরু আগে কয়েকজন আন্দোলনকারী নেতা ডেকে পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে কোটা সংস্কার
আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফের নেতৃত্বে প্রক্টর দফতের যান ১২-১৫ জন নেতাকর্মী। এরপর ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রক্টর দফতরের একটি ভেতরের কক্ষে নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম মুবিনকে নিয়ে যান প্রক্টর। সেখানে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শামসুল আজম, মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী প্রক্টরকে নিয়ে আলোচনা করেন তারা।
সেখান থেকে বের হয়ে মাসুদ মোন্নাফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মানববনন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের অনুমতি না দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। মানববন্ধনের সময় আমাদেরকে কেউ হামলা করলে তারা দায়ভার
নিবে না বলে জানিয়েছেন।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে, আন্দোলনের নামে একটা চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাই অনুমতি দেওয়া হয়নি।’