সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকসহ অন্য মাধ্যম ছাড়াও যদি কেউ ধর্মীয় অবমাননাকর বা উস্কানিমূলক কোনো কর্মকা- ঘটায়, তবে তা সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে আহ্বান জানানো হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাসিরনগর সদরে অবস্থিত দত্ত বাড়ির সামনে দেখা গেছে, একটি হাইএস মাইক্রোবাস থেকে জেলা প্রশাসনের লোকজন মাইকিং করে ওই বিষয়ে এলাকাবাসীকে জানাচ্ছিলেন।
যদিও সচেতনতামূলক এ মাইকিং শুনে ঘাবড়ে যান অনেকেই। দত্ত বাড়ির সীমানায় অবস্থিত নাসিরনগর ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাউন্টারে বসা একজন হিন্দু নারী কর্মী মাইকিং শুনেই তার পাশে থাকা অন্যদের কাছে উদ্বিগ্ন জানতে চান- আবার কই কিতা (কী) হইল রে, দেখ দেখ, আবার কী জানি হয়।
শুধু তার মধ্যেই এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নয়। দত্ত বাড়ি এলাকার অনেক মানুষের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে।
যদিও প্রশাসন এখন কঠোর অবস্থানে আছে। দত্ত বাড়িতে দেয়া গেছে, কড়া পুলিশ প্রহারা। পুলিশ সদস্যদের একদম কাছেই দত্ত বাড়ির মন্দিরে ভাংচুর করা কালী প্রতিমা দেখা যায়।
দত্ত বাড়ির প্রধান প্রবেশ পথের বিপরীতে একটি দোকান, নাম মা টেলিকম। দোকান বরাবর পথ দিয়েই সেদিন দুর্বৃত্তরা দত্ত বাড়িতে লাঠিসোটা, দা নিয়ে হামলা চালায় বলে জানান প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও দত্ত বাড়ির অন্যতম মালিক বলাই দত্ত।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, কালী মন্দিরের পেছনে একটি বড় কক্ষ রয়েছে, যেখানে পূজার সাজ-সরঞ্জাম রাখা হতো, সে ঘরের ভেতর বেঞ্চ, মাটির কলস ভাঙা, বিকৃত অবস্থায়। তিনটি জানালার মধ্যে দুটোর গ্রিল বাঁকানো।
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর দে জানান, দুর্বৃত্তরা দত্ত বাড়ির ড্রইং রুমেও প্রবেশের চেষ্টা চালায়। দরজা-দেয়ালে লাঠি, দা ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে আঘাত করে।
এসব আঘাত দৃশ্যমান দেখা গেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
এদিকে, শতবর্ষী দত্ত বাড়িতে বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা। বিকালে দেখা গেছে, ভক্তরা এসেছেন মন্দিরে। তাদেরকে খিঁচুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করাচ্ছিলেন বলাই দত্ত।
দত্ত বাড়ির অন্যতম মালিক ও নাসিরনগর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত বলেন, ‘একাত্তরেও আমাদের বাড়ির উপর একটা ফুলের টোকা পড়েনি। কিন্তু এখন এমন ঘটনা ঘটল, যাতে আমরা খুবই বিমর্ষ’।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নাসিরনগর মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক সন্তুষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। হামলাকারীদের শোরগোল শুনে মনে হচ্ছিল, যুদ্ধ বেঁধে গেছে’।
দত্ত বাড়ির মূল ভবনের উচ্চতা ভূমি থেকে প্রায় ত্রিশ ফুট উঁচু। এর উপর দিয়ে ইটপাটকেল ডিঙিয়ে বাড়ির উঠোনে পড়তে থাকে বলে জানান সন্তোষ চন্দ্র রায়।
তারসহ ১০ থেকে ১২টি পরিবার দত্ত বাড়িতে বসবাস করেন।