গোষ্ঠীগত সংর্ঘষে নবীনগরের গৌরনগর এখন আতঙ্কের জনপদ !
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: তিতাস-পাগলা নদীর তীরে উর্বর ভূমির গ্রাম গৌরনগর। নানানজাতের রবিশষ্যের উৎপাদনস্থল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন এই গ্রামটি অবস্হিত। আর এখানে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষের কারনে কয়েকবছর যাবৎত শান্ত এই গ্রামটি এখন প্রায় বিরানভূমি। চারিদিকে ভাঙচুর-লুটপাটের ক্ষতচিহ্ন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে গ্রামের দু’প্রান্তে দু’টি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি জোড়া খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার লোকজনের ব্যবসা – বানিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে, ব্যাহত হচ্ছে ও শিক্ষা কার্যক্রম সহ স্বাভাাবিক জীবন যাত্রা । গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো গ্রামই এখন পুরুষশূন্য। যারা আছেন তারাও দিন কাটাচ্ছেন আতংকে। একই গোষ্ঠীর দুইজন খুনের ঘটনায় গৌরনগর গ্রামটি এখন যেন আতঙ্কের জনপদ। হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের ভয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন অনেকেই। প্রতিদিনই গ্রাম ছাড়ছে কোনো না কোনো পরিবার। কেবল পুরুষরাই নয়, নারীরাও জীবনের নিরাপত্তায় সহায়-সম্বল নিয়ে গ্রাম ছাড়ছেন। ফসলী জমি পড়ে আছে পরিত্যাক্ত অবস্থায়।
সরজমিনে এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বেড়িয়ে এসেছে বাস্তব চিত্র। তাদের চোখে- মুখে শুধুই আতংকের ছাপ । ভয়ে কথা বলতে নারাজ তারা। তবে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, বিগত ৮৬ সালে সরকার গোষ্ঠী ও আজইরা গোষ্ঠীর মধ্যেকার সংঘর্ষে আজইরা গোষ্ঠীর কালু মিযার পুত্র আলী হোসেন খুনের মধ্যদিয়ে গ্রামটিতে অশান্তির সূত্রপাত । ৭/৮ বছরের মাথায় বিষয়টি নিষ্পত্তি ঘটলেও বিগত ২০১১ সালে দ্বিতীয় দফার ঝগড়ায় সরকার গোষ্ঠীর রবিউল্লাহ খুন হয়। এই নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা চলমান থাকলেও জনমনে স্বস্থি ছিলো। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় চকবাজারে অতর্কিত হামলার ঘটনায় আজইরা গোষ্ঠীর জয়নাল আবেদীন ও দুলাল মিয়া আহত হয়ে পরে চিকিৎসাধীর অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামী করে দায়ের হয় হত্যা মামলা। গ্রেফতার আতংকে সরকার গোষ্ঠীর লোকজন হয় বাড়ি ছাড়া। পরবর্তী সংঘাত এড়ানোর কথা এলাকার শান্তি বজায় রাখতে গ্রামের দুই প্রান্তে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী দু’টি পুলিশ ক্যাম্প।
ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও লোকজন ফিরতে পারছে না গ্রামে। অপরদিকে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে চলছে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাটের মহোৎসব। গ্রামের শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট প্রতিরোধে সরকার গোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও একটি মামলা দায়ের করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন মহিলা বলেন, ‘বাড়ির পুরুষরা আসতে পারছেনা। আমরাও আতঙ্কের মধ্যে আছি। কেবল সহায়-সম্বল রক্ষায় বাড়িতে থাকতেও আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।’আমাদের ছেলে- মেয়েদের পাড়াশুনাও হচ্ছে ব্যাহত। মসজিদগুলোতে মুসল্লীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। একমাত্র চকবাজারটিও এখন নিষ্প্রাণ। বন্ধ রয়েছে বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট। ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে অবস্থানকারী নারী-বৃদ্ধ-শিশুরাও দিনাতিপাত করছেন আতঙ্কাবস্থায়। ভাঙচুর-লুটপাটের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে বাড়িঘরগুলো। সাজু সরকার, জমাদার মিয়া, মলাই মিয়া, খালেক মিয়া, জাকির মিয়ার বাড়িসহ গ্রামের দৃশ্য দেখলে মনে হবে যেন কোনো যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এলাকা।
এবিষয়ে সরকার গোষ্ঠির আবদুল খালেক সরকার বলেন,‘হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন নির্বিচারে বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর-লুুটপাটসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় এলাকা ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছি।’
আজইরা গোষ্ঠির সরদার আব্বাস মিয়া বলেন,‘এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই। হত্যার সাথে জড়িতদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।’বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুরের বিষয়ে তিনি বলেন , খুনের খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত কিছু লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও এখন এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
এবিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম সিকদার বলেন, ‘হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে দুইটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। লুটপাটের ঘটনায় ৪/৫জনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’