মা-বাবাকে সুখে রাখতে দিনে রাজমিস্ত্রী, রাতে রিক্সা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফুল
আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা হয় এ সময় জীবনের সকল কষ্টের কথা তুলে ধরে সে। সে জানায়, অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে সে।এসএসসি পাস করার পর হন্য হয়ে চাকরি খোঁজতে থাকে। কিন্তু চাকরি নামের সেই সোনার হরিণের দেখা মেলেনি কোথাও। যৌথ্য তিন ভাইয়ের অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে দুই বোনকে বিয়ে দেয়া হয়।
এরপর দুই ভাইকে বিয়ে করিয়ে যখন উন্নতির দিকে, তখনই ফাটল ধরে সংসারে। বিয়ের পর দুই ভাই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মা বাবাকে নিয়ে বেকায়দায় পরে আশরাফুল। খোঁজতে তাকে চাকরি। আর এই দূর্বলতার সুযোগ নেয় তারই এক বন্ধু। সরকারি চাকরি দেয়ার কথা প্রতারণা করে তার ববন্ধু।বর্তমানে আশরাফুল হবিগঞ্জ শহরের ফায়ার সার্ভিস রোড এলাকায় একটি বাসায় রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করছে। সেই সাথে শচীন্দ্র কলেজে ডিগ্রী ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত রয়েছে।
মা-বাবাকে ভালো রাখতে একটি চাকরিতেই সে সন্তুষ্ট নয়। কঠোর পরিশ্রমি এই যুবক সারাদিন রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করার পর আবার রাতভর রিক্সা চালায়।কলেজছাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম। স্বপ্ন দেখেছিলেন মা-বাবা, ভাই-বোনকে নিয়ে সুখের একটি সংসার হবে। কিন্তু অবাগা আশরাফুলের স্বপ্ন আর পুরণ হলো না।
বড় দুই ভাই বিয়ে পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। মা-বাবাকে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তার উপর আবার লেখাপড়ার খরচ। সব মিলিয়ে এক কষ্টে জীবন কাটছে তার।কিন্তু কঠোর পরিশ্রমি এই যুবক হতাশ হননি। সারাদিন রাজমিস্ত্রির সহকারি হিসেবে কাজ করার পর সারারাত আবার রিক্সা চালায় সে। আশরাফুল ইসলাম হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের সিংগ্রামের বাসিন্ধা আছকির মিয়ার ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে ৪র্থ। শচীন্দ্র কলেজে ডিগ্রী ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত সে।
সে বলে- ‘নিয়মিত কলেজে যেতে মন চায়। কিন্তু, কাজের কারণে যে পারি না। শুধু পরিক্ষাটাই দিতে পারি।সে আরও বলে- ‘এখন স্বপ্ন একটাই। ভালো একটি চাকরি পেলে মা-বাবাকে নিয়ে শহরে থাকতাম। মায়ের হাতের রান্না খেলে আমার আর কোন কষ্ট থাকবে না।’সকাল ১১টা থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজে যেতে হয় তাকে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা কাজ করার পর বিকেল ৫টায় একটি নিউশন করায়। পরে কিছু সময় ঘুমিয়ে রাত ১২টার দিকে রিক্সা নিয়ে ভেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।শোনসান নিরব রাতে সবাই যখন গভির ঘুমে তখন গুরুত্বপূর্ণ কাজে রাস্তায় থাকা মানুষজনকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয় তার তিন চাকার রথটি দিয়ে। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে তার রিক্সা চালানো।
দিনরাত পরিশ্রম করা এই যুবকটি মা-বাবাকে সাধ্যমতো ভালো রাখলেও নিজে থাকে একটি চাপ্টা ঘরে। যেখানে রাজমিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করছে, সেখানেই একটি এক চালার চ্যাপ্টা ঘরে বসবাস করছে সে।কঠোর পরিশ্রমি এই যুবক এখন স্বপ্ন দেখে একটি সরকারি চাকরি করে মা-বাবাকে নিয়ে একত্রে বসবাস করবে।আশরাফুল বলেন- মা-বাবার সাথে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই।কিন্তু আর্থিক অবস্থার কারণে বৃদ্ধ মা-বাবাকে গ্রামে রেখে আসতে হয়েছে। যখন যা প্রয়োজন পরে আমি আমার মা-বাবকে দিয়ে আসি। মা’য়ের রান্না করতে অনেক কষ্ট হয়, তাই প্রতিমাসে সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে আসি।’