রাজধানীর বুকে হোটেল ভাড়া মাত্র ৮০ টাকা!
প্রথম দেখায় মনে হবে কয়েকটি লঞ্চ যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। যাত্রী বোঝাই হলেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু না লঞ্চ হলেও এগুলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে না কোনদিন। এখানেই পানির উপরে ঠায় দাড়িয়ে থাকবে, প্রায় ৫০ বছর ধরে এভাবেই দাড়িয়ে আছে। লঞ্চ হলেও এগুলো এখন ব্যবহার করা হয় মানুষের থাকার আবাসিক হোটেল বা বোডিং হিসেবে। স্থানীয় লোকজনের কাছে নৌকা বোডিং নামে এগুলো পরিচিত।
রাজধানী ঢাকার হোটেলগুলোতে বেশি টাকা খরচ করে রাত যাপনের সামর্থ্য নেই খেটে খাওয়া অল্প আয়ের মানুষের। এজন্য তারা খুব সস্তায় বুড়িগঙ্গার বুকে এইসব ভাসমান হোটেলে রাত কাটায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েক বছর পর থেকে নির্মিত এ বোর্ডিংগুলো আজও বুড়িগঙ্গার বুকে ভাসছে। সদরঘাটের ওয়াইজঘাট এলাকায় এমন ৬ টি ছোট-বড় লঞ্চে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে।
শরীয়তপুর বোর্ডিং, ফরিদপুর মুসলিম হোটেল ও নাজমা বোর্ডিংয়ের প্রতিটিতে রয়েছে ৩০ থেকে ৫০টির মতো কেবিন। প্রতিটি কেবিনে রয়েছে বিদ্যুতের ব্যবস্থা। আছে লাইট এবং ফ্যান। এছাড়াও রয়েছে গোসলখানা ও বাথরুমের ব্যবস্থা। যদিও গোসলখানা ও বাথরুম তেমন মানসম্মত নয়। তবুও এখানে রাত যাপনকারী শ্রমিকদের কাছে এগুলোই অনেক বড় পাওয়া।
রাত কাটানোর জন্য এই ভাসমান আবাসিক হোটেলগুলোতে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় সিঙ্গেল কেবিন। ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। এমনকি কোনো কেবিন খালি না থাকলে ডেকের উপরে মশারি টানিয়ে দিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় রাত কাটানোর ব্যবস্থাও আছে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, কোনো দরিদ্র মানুষকে টাকার অভাবে ফিরিয়ে দেয়া হয় না এসব হোটেল থেকে।
শরিয়তপুর বোর্ডিংয়ে অবস্থানকারী সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ফল বিক্রেতা রোকন হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে এই এ বোর্ডিংয়ে থাকেন। এখানে থাকার জন্য তাকে প্রতি দিনের জন্য দিতে হয় ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। রোকন হোসেন বলেন, ‘দশ পনের দিন এইখানে থেকে ফলের ব্যবসা করি, আবার বাড়ি চলে যাই। এখানে থাকা ও মালামাল রাখার নিরাপদ ব্যবস্থা আছে, যা অন্য হোটেলে নাই। এ বোর্ডিংগুলো না থাকলে হয়তো আমাদের মতো গরীব মানুষের ঢাকায় থাকা ও ব্যবসা করা সম্ভব হতো না।’
সাত-আট বছর ধরে ভাসমান হোটেলে অবস্থানকারী মাদারীপুরের জাহাঙ্গির হোসেন আলাপকালে বলেন, ‘সদরঘাট এলাকায় এর থেকে কম টাকায় থাকার আর কোনো হোটেল নাই। আর আমরা প্রায় সবাই ঘাটেই কাজ করি, তাই এইখানে ঘাটের কাছেই থাকতে পারি, এইখানে থাকলে সহজেই হেটে কাজে আসা যাওয়ার সুবিধা পাওয়া যায়।’
নাজমা বোর্ডিংয়ের ম্যানেজার আকতার হোসেন বলেন, ‘ঘাটের শ্রমিক, হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই নিয়মিত থাকেন আমাদের এখানে। এ ছাড়া যেসব দরিদ্র সাধারণ মানুষ সদরঘাটের নৌপথে যাতায়াত করে তাদের মধ্যেও অনেক মানুষ এখানে রাত কাটায় অল্প টাকায়।’ সূত্র:বাংলা ইনসাইডার