আজ মৌসুমীর জন্মদিন
বিনোদন প্রতিবেদক : প্রথম ছবির নাম ছিল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। মানে সব কিছুই শেষ। কিন্তু শেষ হয়নি; বরং শুরু হয়েছিল মৌসুমীর যাত্রা। সেই শুরু, যার শেষ নেই! প্রিয়দর্শিনী এ নায়িকার জন্মদিন আজ।
বর্তমান প্রজন্মের অনেক অভিনেত্রীই তাকে আদর্শ মনে করে পথ চলছেন। চলবেন আগামীতেও। কারণ দর্শক ধরে রাখার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী নব্বই দশক থেকে আজ পর্যন্ত সমান জনপ্রিয়। দুই যুগেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন দুই শতাধিকের বেশি ছবি। আজ মৌসুমীর জন্মদিন। অন্যবারের চেয়ে এবারের জন্মদিনটি তার কাছে অন্যরকম। কারণ বিশেষ দিনটিতে মৌসুমী তার ভক্ত-দর্শকের জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে আসছেন। তবে সেটা জানতে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষায় থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমীর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আজ। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার স্বামী চিত্রনায়ক ওমর সানী।
জন্মদিন উপলক্ষে সারাদিন ব্যস্ততায় কাটবে মৌসুমীর। ছেলে ফারদীন পড়াশোনার কাজে দেশের বাইরে থাকায় স্বামী ও কন্যা ফাইজাকে নিয়ে জন্মদিনের প্রথম প্রহরের শুভ সূচনা করেন তিনি। তানজিনা সুলতানার উদ্যোগে মৌসুমীর ফ্যান ক্লাবের আয়োজনেও থাকছে বিশেষ একটি অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে এবারের জন্মদিন তার কাছে অনেকটাই আলাদা ও বিশেষায়িত হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। মৌসুমী বলেন, ‘আমি আয়োজন করে জন্মদিন উদযাপন করি না। তবে আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনরা এ দিনটিতে বিশেষ আয়োজন করে থাকে। আর ভক্তরা তো আছেই। আমি তাদের চাওয়াটাকেই বেশি প্রাধান্য দেই।’
মৌসুমী অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত দুটি চলচ্চিত্র হচ্ছে, একে সোহেলের ‘পবিত্র ভালোবাসা’ ও ইস্পাহানী আরিফ জাহানের ‘নায়ক’। আগামী ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার অভিনীত নতুন ছবি ‘রাত্রির যাত্রী’। এটি পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এ দিকে রহমতুল্লাহ তুহিনের নির্দেশনায় বিদেশগামী যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করেছেন মৌসুমী। তিনি স্বপ্ন দেখেন, দেশের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক সুনাম অর্জন করবে।
মৌসুমী বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা আছেন, যারা খুব মেধাবী। যথাযথ বাজেট পেলে তারা অনেক ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারবেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সুনাম বয়ে নিয়ে আসতে পারবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু চলচ্চিত্র বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত হচ্ছে। কিন্তু আমি চাই সে সব আন্তর্জাতিক পুুরস্কার লাভ করবে, যা বিশ্ববাসীর কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য, এক নামেই যে পুরস্কারের কথা সবাই জানেন। আমার ছেলে ফারদিনকে নিয়েও আমি এমন স্বপ্ন দেখি, হয়তো সেই পুরস্কার তার হাত দিয়েও একদিন আসবে আমাদের দেশে।’
এক সময় নিয়মিত ছবিতে অভিনয় করলেও এখন বেছে বেছে কাজ করছেন মৌসুমী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে এখন ভালো চিত্রনাট্যের অভাব। পেশাদার চিত্রনাট্যকার পাচ্ছি না আমরা। যারা আছেন তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে না। যারা একটু ক্রিয়েটিভ, তারা বিজ্ঞাপনে চলে যাচ্ছেন। তাই প্রতিদিনই কাজ আসলেও চিত্রনাট্য পড়ার পরে আর কাজ করতে ইচ্ছে হয় না।’
মৌসুমী এখন পর্যন্ত তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। নারগিস আক্তারের ‘মেঘলা আকাশ’, প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ ও মোস্তফা কামাল রাজের ‘তারকাঁটা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তার নির্দেশিত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’। তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বামী ওমর সানী বলেন, ‘মৌসুমী আমার জীবনের আশীর্বাদ। সে এ দেশের কোটি দর্শকের ভালোবাসার মানুষ। আমি দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে সুন্দরভাবে আর সুস্থভাবে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখেন।’
নন্দিত পরিচালক এহতেশাম মৌসুমীকে প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রথম অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রে। ছবিতে তার সহশিল্পী ছিলেন প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ। এ চলচ্চিত্রের মহরত অনুষ্ঠানে মৌসুমীকে দেখে অনেকেই বলেছিলেন, ‘এই মেয়েকে দিয়েই হবে।’ কথাটা কিন্তু বিফলে যায়নি। প্রিয়দর্শিনী এ অভিনেত্রীকে দেখতে এখনো সিনেমা হলে দর্শকের ভিড়, যা কখনোই কমবে না।