আন্তর্জাতিক ডেস্ক :উইকিলিকসের অন্যতম পরিচালক ও সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের প্রতিষ্ঠাতা গ্যাভিন ম্যাকফাডিনের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়া হচ্ছে না জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের। ঘনিষ্ঠ এই সহচর ও পরামর্শদাতার শেষকৃত্যে যোগ দিতে তার বিরুদ্ধে সুইডেনে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার পরোয়ানা সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের দাবি তুলেছিলেন তিনি। তবে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, শনিবার (২২ অক্টোবর) লন্ডনে নিভে যায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র গ্যাভিন ম্যাকফাডিনের জীবনপ্রদীপ। সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের প্রতিবেদনে প্রথমে তার মৃত্যুর খবর দিয়ে এর জন্য সাময়িক অসুস্থতাকে দায়ী করা হয়। তবে পরে ২৩ অক্টোবর তারা গ্যাভিনের পরিজনদের বরাত দিয়ে তারা জানায়, দীর্ঘদিন ফুসফুস ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার পরই তার মৃত্যু হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টের মতো ২/১টি সংবাদমাধ্যম ঘটনার বেশ কয়েকদিন পরে এসে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করলেও বেশির ভাগ মূলধারার সংবাদমাধ্যম খবরটি ব্লাকআউট করে। মূলধারার শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো গ্যাভিনের মৃত্যুর ব্যাপারে নীরবতার মধ্যেই রাষ্ট্রীয় রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি গ্যাভিনের সঙ্গে তাদের নিজেদের এক পুরনো সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে জানায়, হিলারির বিরুদ্ধে সম্প্রতি সোচ্চার হয়েছিলেন এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক। হিলারির ফাঁস হওয়া ইমেইল প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে গ্যাভিন বলেছিলেন, উইকিলিকসের ফাঁস করা হিলারি সংক্রান্ত নথিগুলো খুবই সামান্য। উইকিলিকস কর্তৃক আরও এমন নথি প্রকাশের আভাষ দিয়েছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপ্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমে। গুঞ্জন ওঠে, হিলারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েই চলে যেতে হয়েছে গ্যাভিনকে।
ওই গুঞ্জন সত্য কিনা, তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে হিলারির অন্যায্যতার বিরুদ্ধে গ্যাভিন কেবল নিজে কথা বলেছিলেন তাই নয়, বন্ধু জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি প্রবল প্রত্যয়ে। উইকিলিকসের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে কাজ করছেন। অ্যাসাঞ্জ-এর পরামর্শক/উপদেষ্টা হিসেবেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এ ছাড়াও অ্যাসাঞ্জের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ডিফেন্স কমিটিও গঠন করেন তিনি। সেই ঘনিষ্ঠ সহচরের শেসকৃত্যে যোগ দিতে সুইডেন সরকারকে তার বিরুদ্ধে থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান অ্যাসাঞ্জ। কিন্তু সুইডিশ আইনজীবী কার্যালয় তা নাকচ করে জানায়, এই পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হবে না কেননা আদালতের নির্দেশে এই ধরনের রেয়াৎ দেওয়ার অনুমোদন নেই।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০১২ সালের জুন থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে বসবাস করছেন অ্যাসাঞ্জ। সেই দূতাবাস থেকে বের হলে সুইডেনের দেওয়া ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার করা হবে তাকে। তাই পরম প্রিয় বন্ধুর শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে পূরণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। কেননা ইকুয়েডর দূতাবাসের বাইরে এলেই তাকে গ্রেফতার করার জন্য মুখিয়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অ্যাসাঞ্জের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ম্যাকফাডিন ছিলেন একাধারে অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার। তিনি ২০০১ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সংস্থা সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম(সিআইজে) প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছে ও প্রচুর দক্ষ সাংবাদিক তৈরি করেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৬ বছর।
এদিকে সুইডেনে দুই নারীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠার পর ২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে আছেন অ্যাসাঞ্জ। তবে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি। অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা, তিনি সুইডেনে গেলে সুইডিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রত্যর্পণ করবে, আর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বিচারের নামে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
সম্প্রতি অ্যাসাঞ্জকে মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে জাতিসংঘের আইনি প্যানেল। সেই সঙ্গে এতোদিন ‘স্বাধীনতাবঞ্চিত’ করে রাখার কারণে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। আটক রাখার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে অ্যাসাঞ্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে করা তদন্তের বিস্তারিত জানাতে গিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি এ সুপারিশ করা হয়। এর আগের দিন অ্যাসাঞ্জকে আটক রাখার সিদ্ধান্তকে বেআইনি উল্লেখ করে রুল জারি করে জাতিসংঘের প্যানেল। তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের তরফে বলা হয়েছে, ‘জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে কোনও কিছুর পরিবর্তন হবে না এবং রায়ের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো হবে।’
এদিকে উইকিলিকসের সম্পাদনা বোর্ডের স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে অ্যাসাঞ্জের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে দাবি করা হয়, লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। জাতিসংঘের নির্দেশনা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে যুক্তরাজ্য ও সুইডেন অ্যাসাঞ্জকে বেআইনিভাবে আটকে রেখেছে। উইকিলিকসের দাবি, এভাবে তার স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে অন্যায়ভাবে।