নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান অপ্রচলিত বাজার চীন ও ভারত থেকে রপ্তানি আয় বিপরীত দিকে ছুটছে। দেশের পোশাকপণ্য রফতানির অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১১টিরও বেশি দেশকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে পণ্যটি রফতানিতে আয় বেড়েছে ৪২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর ভারতে পোশাক রফতানি বাবদ আয় কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
উল্লেখ্য, চীন ও ভারত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত আরো বাজারের মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও তুরস্ক। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পাঁচ দেশ থেকে আয় কমেছে এবং বাকিগুলো থেকে বেড়েছে।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদি বলেন, চীন মিডিয়াম ও লো এন্ডের পণ্য তৈরি করছে না। সেগুলো নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশে তৈরি করে কিনতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ভারতে সম্ভাবনা অনেক বেশি হলেও দেশটি নিজেদের চাহিদা নিজেরাই মেটায়। ফলে ভারতের বাজারের শুল্কমুক্ত সুবিধার সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না আমরা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পণ্য রফতানির পরিসংখ্যান প্রকাশ করে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এ পরিসংখ্যান থেকে পোশাক খাতের প্রান্তিক রফতানি আয়ের দেশভিত্তিক তথ্য সংকলন করেছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ সংকলনে চীন ও ভারতসহ অপ্রচলিত বাজারের রফতানি গতিপ্রকৃতির চিত্র উঠে এসেছে।
এতে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চীন থেকে পোশাক রফতানি বাবদ আয় হয়েছে আট কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল পাঁচ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এ হিসাবে আয় বেড়েছে ৪২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারত থেকে পোশাক রফতানি বাবদ আয় হয়েছে তিন কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল তিন কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ হিসাবে দেশটি থেকে আলোচ্য সময়ে আয় কমেছে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
চীন ও ভারতের রফতানির হালনাগাদ গতিপ্রকৃতি প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চীন ও ভারত দুটি দেশই আমাদের দেশের পোশাক রফতানির জন্য সম্ভাবনাময় বাজার। কিন্তু দুটি দেশ থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আয় বাড়ছে না। চীনে আয় বাড়লেও তা দেশটির চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তারপরও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কারণ বড় বড় ক্রেতা চীনে বিক্রয়কেন্দ্র চালু করছেন। আর পোশাক কিনছে বাংলাদেশ থেকে। অন্যদিকে প্রতিবেশী ও জনসংখ্যার বিচারে ভারত অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও শুল্ক-অশুল্ক বাধায় দেশটিতে রফতানি বাড়ছে না। যদিও দেশটি আমাদের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে কিন্তু রাজ্যের ভিন্নতায় এখনো কাউন্টারভেইলিং ডিউটি দিতে হয়।
বিজিএমইএ জানায়, চীনে ওভেন ও নিট দুই ধরনের পোশাকপণ্যই রফতানি হয়। তবে এর মধ্যে ওভেন পোশাক রফতানি হয় বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটিতে রফতানি বৃদ্ধিতে বেশি ভূমিকা রেখেছে নিটপণ্য। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে ওভেনপণ্য রফতানি হয় চার কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় তিন কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবে চীনে ওভেনপণ্যের রফতানি থেকে আয় বেড়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে নিটপণ্য রফতানি থেকে আয় হয় তিন কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় হয়েছিল দুই কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এ হিসাবে চীনে নিটপণ্য রফতানি থেকে আয় বেড়েছে ৬৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আর ভারতে আয়ের পরিমাণ বিচারে বেশি রফতানি হয় ওভেনপণ্য। ওভেনপণ্যের আয় কমে যাওয়ার ফলেই আলোচ্য প্রান্তিকে দেশটি থেকে রফতানি আয় কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারতে ওভেনপণ্য রফতানি হয়েছে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল দুই কোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ হিসাবে আয় কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিটপণ্যের রফতানি হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এ আয় ছিল ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এ হিসাবে নিটপণ্য রফতানি বাবদ আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ।