২৭শে আগস্ট, ২০১৬ ইং, শনিবার ১২ই ভাদ্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ


বিয়ের আগে কিছু বিষয়ে বলুন না


Amaderbrahmanbaria.com : - ২৫.০৮.২০১৬

লাইফস্টাইল ডেস্ক : ৬ বছরের সম্পর্ক ছিল অহনা ও রাতুলের। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকে সম্পর্ক। মাস্টার্স শেষ করে খবরের কাগজের অফিসে নতুন চাকরি পাওয়ার পরই রাতুলের থেকে দূরে সরতে থাকে অহনা। এদিকে রাতুল তখনও বেকার। অহনার ব্যস্ততা ক্রমে তাঁদের সম্পর্ককে ভাঙতে শুরু করেছে।
ভালোলাগা গুলোকে হারাতে শুরু করেছে মন্দলাগা। সুন্দরী প্রেমিকার তখন অনেক ব্যস্ততা। অফিসের দারুণ দাপুটে জীবন নবাগতাকে ঘিরে ধরেছে। মনে মনে ফুসতে থাকে রাতুল। অ্যাড এজেন্সিতে কপি রাইটারের একটা চাকরিও জুটে যায় তখন। সেইসঙ্গে পাকাপাকিভাবে ইতি টানতে হয় সম্পর্কেও।

কিন্তু এত সহজে কি পাখিকে উড়িয়ে দিতে পারে রাতুলের মতো পুরুষ? শুরু হয় প্রতিহিংসার নোংরা খেলা। রাতুলের সঙ্গে তোলা অহনার অন্তরঙ্গ কিছু মুহূর্তের ছবি ইন্টারনেটে অপলোড করে দেয় রাতুল। অহনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, জি-মেল অ্যাকাউন্ট, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কোনও কিছুকেই রেহাই দেয় না সে। অবশেষে পুলিশের দারস্থ হয় অহনা। রাতুল এখন সাইবার ক্রাইমের আসামী। ৩ মাস ধরে জেলে বন্দি।এমন ঘটনা আজ নতুন না। খবরের কাগজ খুললেই এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকেই এই প্রতিহিংসাত্মক মনোবৃত্তি গড়ে ওঠে। পুরুষদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি। কেন না, তারা রিজেকশন সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে এখনকার পুরুষদের মধ্যে প্রতিহিংসার মাত্রাটা একটু বেশি মাত্রায় সামনে চলে আসছে। কোনও মহিলা নাকোচ করলে, তাঁর পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে যায় এরা। নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। লেখাপড়া জানা, ডিগ্রিধারী, উচ্চবংশীয় পুরুষদের মধ্যেও এই নোংরামি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইদানিং।

কিন্তু মহিলাদের মধ্যে সে অর্থে সচেতনতা গড়ে উঠছে না। সম্পর্কে জড়িয়ে সর্বস্ব সমর্পণ করছে। এবং পরবর্তী সময় চোখের জল ফলছে। তাই সম্পর্কে জড়ানোর পরে ও বিয়ের আগে, ওই কোর্টশিপের সময়টায়, মহিলাদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি ভুল পদক্ষেপ যাতে সারাজীবনের আপশোশের কারণ না হয়, সে জন্য কিছু বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন তাঁরা –

বিশ্বাসে মেলায় বস্ত, তর্কে বহুদূর:
প্রেমের সম্পর্ক সবসময়ই মধুর। আরও ভালো থাকার জন্যে মানুষ প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। তাই সেই সম্পর্কে যে সুখের মুহূর্ত আসবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু সুখের সাগরে ভেসে যাওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করা প্রয়োজন, অপরদিকের মানুষটি কতখানি বিশ্বাসযোগ্য। বিশ্বাসে যদি একচিলতেও ফাঁক থাকে আগে, থেকেই সাবধান হয়ে যান। অনেকসময় মহিলাদের বিশ্বাস অর্জন করে তাঁদের ঠকানো হয়। সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। মেকি কথায় ভুলবেন না। নিজের মতো করে সব কিছু চুপিসারে যাচাই করে নিন। কী কী যাচাই করবেন? পরিবার সম্পর্কে যাচাই করে নিন। স্কুল, কলেজ, লেখাপড়ার ব্যাপারে প্রেমিক যা যা বলেছে, তা সত্যি না মিথ্যে যাচাই করে নিন। অফিস বা কর্মক্ষেত্রে খোঁজ চালান। রোজগারপাতি নিয়েও অনেকে মিথ্যে কথা বলে। তাই সে ব্যাপারেও সঠিক তদন্ত দরকার। প্রেমিক কোনও গুপ্তরোগের শিকার কি না, সম্পর্কের শুরুতেই জেনে নেওয়া ভালো। প্রেমিক সত্যি কথা বলে কি না, নাকি ছোটো ছোটো বিষয়েও মিথ্যের আশ্রয় নেয়, জানলেই তাকে বিশ্বাস করতে সুবিধে হবে।
নিজের পাসওয়ার্ড, নিজের কাছেই নিরাপদ:
সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল বলে, আপনাকেও যে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে, তা কিন্তু একেবারেই নয়। প্রেমিকার গতিপ্রকৃতি জানার জন্য অনেকসময় ফেসবুকের পাসওয়ার্ড, ই-মেল পাসওয়ার্ড চেয়ে বসে পুরুষ। সেখানেই অনেকে ভুল করেন। নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করতে সবকিছুর চাবি প্রেমিকের কাছে সমর্পণ করেন। এবং সেটাই হয় প্রেমিকের মোক্ষম চাল। ধীরে ধীরে পরাধীন হয়ে ওঠে সেই নারী। এমনকী, অনেকসময় তাঁকে ব্লেকমেল করাও শুরু হয়। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাপয়সা গায়েব হয়ে যায়। নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অনেক দু-নম্বরি কারবার শুরু হয়। ব্যাপারগুলোয় অবগত হওয়ার অনেক আগেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই সাবধান, প্রেমিকের হাতে সবকিছুর চাবি তুলে দেওয়ার আগে সতর্ক থাকুন। তবে হ্যাঁ, সবার প্রবৃত্তি একরকম হয় না। প্রেমিকার নাড়িনক্ষত্র জেনেও তাঁকে বিরক্ত করে না। তাঁর গোপণীয়তা লঙ্ঘন করে না।

মনের মধ্যে রাখব তাকে, মাথায় বসাবো না:
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরুষের মধ্যে শাসন করার প্রবণতা বেশি। নারী শাসিত হতে অভ্যস্ত। সেই সূত্র ধরেই বলি, সম্পর্কের শুরুতে কিংবা তার আগে চিত্রটা কিন্তু উলটো থাকে। নারীকে প্রভাবিত করতে নানা পন্থা অবলম্বন করে পুরুষ। নারীর মনের মতো হয়ে উঠতে চায়। নারীমন জয় করার নেশায় নারীর পদতলে বসে পড়ে। নারীকে বসায় সিংহাসনে। কিন্তু চিত্র পালটে যায় সম্পর্ক শুরুর পর। ধীরেধীরে নারীকে এমনভাবে প্রভাবিত করে পুরুষ, যে নিজের অজান্তেই নারী তাকে মাথায় বসিয়ে ফেলে। এবং তখনই বিপদ ঘনিভূত হতে শুরু করে। নারীকে এক আঙুলে নাচাতে শুরু করে পুরুষ। এমন পরিস্থিতি সকলের ক্ষেত্রে ঘটে না ঠিকই। কিছু পুরুষ সত্যিই অন্যধরনের মানসিকতা নিয়ে চলেন। তাঁরা সম্পর্কের সমীকরণ বজায় রাখেন দারুণভাবে। তাই কিছু সম্পর্ক কখনও মাধুর্য হারায় না। কিন্তু সকলের ভাগ্য তো এক হয় না। কিছু সম্পর্ক বিষিয়ে যায় পুরুষের উদ্ধত্যের কারণেও। তাই বিশেষজ্ঞদের মত, মাথায় না, মনে স্থান দিন পুরুষকে। প্রেমের কারণে অন্ধ হবেন না। সঠিক বিচারবিবেচনা জীবন থেকে অনেক সমস্যাকেই তাড়াতে সাহায্য করে। রুখে দাঁড়াতে শক্তি জোগায়।
ছবি নয়, ভিডিও নয়:
সম্পর্কে জড়ালে শারীরিক সম্পর্কও শুরু হতে পারে। এখনকার যুগে এসব অনেকটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। প্রি-ম্যারিটাল সেক্সকে আধুনিক যুগের অধিকাংশই মেনে নিয়েছে। তাই সে ব্যাপারেও সতর্কতা থাকা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, দৈহিকসম্পর্কে জড়ানোর আগে সঙ্গীর অতীত সম্পর্কে জানা দরকার। শরীরে কোনওরকম যৌনসংক্রমণ আছে কি না জানা দরকার। এছাড়াও, অনেক বেশি সচেতন হওয়া দরকার ছবি তোলা ও ভিডিও শুট করার ব্যাপারে। বলা যায় না, কোনও একটি দুর্বল মুহূর্তে প্রেমিক নিজের সঙ্গে আপনার ফোটো বা ভিডিও শুট করে রেখেছে এবং পরবর্তীকালে সেটাই হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাশ। প্রেমিকাকে জব্দ করার মূল হাতিয়ার। তাই বিয়ের আগে প্রেমিকের সঙ্গে কোনও ফোটো, ভিডিও শুট করবেন না। অন্তরঙ্গ শুট তো দূর, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ফোটোও তুলবেন না কখনও।

হাড়ির কথা হাড়িতেই থাক চাপা
এই বোকামি অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু আর না। প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের সব খুঁটিনাটি কথা বলে বসেন প্রেমিককে। পড়ে সেটা নিয়েই সমস্যায় পড়ে যান। প্রেম ভাঙার পর সেই অতি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রেমিকই ঘটা করে প্রেমিকার পরিবারের কথা, প্রাক্তনদের কথা পাঁচজনকে বলে নিন্দামন্দ করে। ছোটো ব্যাপারগুলিকে রং চড়িয়ে বলে প্রেমিকার চরিত্রহনন করার চেষ্টা করে। তাই সব কিছু প্রেমিককে বলা বন্ধ করুন। বিশেষ করে পরিবারের কোনও গোপন কথা, প্রাক্তন প্রেমের কথা, বা অন্য কোনও দুর্বলতার কথা বলবেন না প্রেমিককে। নিজেকে বাঁচিয়ে প্রেম করুন, আনন্দ করুন।

সবশেষে একটা কথা – কাউকে অযাচিত সন্দেহ করবেন না। সব মানুষ খারাপ হয় না। কেউ কেউ সত্যিই ভালো। সেই ভালো মানুষটিকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করুন। তাকেই বিশ্বাস করুন, যে বিশ্বাস পাওয়ার যোগ্য। ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে চললে, ঠক্কর খেয়ে খেয়ে কপাল ভাঙবেই।

Disclaimer – এই লেখাটি কোনও ব্যক্তিবিশেষকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়। লেখায় উল্লিখিত চরিত্ররা কাল্পনিক। বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটলেও, কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা লেখা হয়নি।





Loading...


প্রকাশকঃ মোঃ আশ্রাফুর রহমান রাসেল
সম্পাদকঃ জাবেদ রহিম বিজন

Amaderbrahmanbaria.com
email : [email protected] (news)
Phone: +880851 62307
+8801963094563



close