নিউজ ডেস্ক : রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান-সন্ততি, আত্বীয়-স্বজনদের নবগঠিত কমিটিতে স্থান দিয়ে বিষয়টি তারা পুরো জাতির কাছে স্পষ্ট করেছে।
তিনি বলেন, ‘৫শ’ জনের একটা তালিকা দিয়ে তারা একটা কমিটি গঠন করেছে। যেখানে যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত, পাক হানাদারদের সহযোগিতা করার জন্য যাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হয়েছে, তাদেরকে রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালের পর আপনারা দেখেছেন যে কি ঘটেছে, সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের ওপর এরা আক্রমণ করেছে এবং এদের চরিত্র একটুও বদলায়নি। ’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ‘যাদের বিচার হয়েছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে- এদেরই ছেলে-পেলে নিয়ে যদি কোন দল গঠন করা হয়- তো সেই দল কি এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, সে দল কি দেশের মানুষের জন্য শান্তি আনতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তাঁর কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনাজনিত আহত এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের জন্য বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্র্রাস্ট (ডব্লিইজেডব্লিউটি)-এর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান অন্ষ্ঠুানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইসব যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কমিটিতে স্থান দেয়া অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আজকে দেশের মানষের কাছে স্পষ্ট হওয়া উচিত। তারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন, এ চক্র দেশটিকে একটি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ সময় বলেন, সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ এদেশে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। আর এই লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কোন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের স্থান হবে না।
দেশের চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের বিচার কোন নতুন ঘটনা নয়। দেশে প্রায় ২১ বছর যুদ্ধাপরাধী চক্র শাসন ক্ষমতায় থাকায় তারা অবৈধ বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ে তুলেছে। যে কারণে নানাভাবে বিচারকে প্রভাবন্বিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আমাদের নীতিতে অটল রয়েছি। আমরা এই বিচার কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং এজন্য ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা, জীবন-মৃত্যু কোন কিছুরই আমরা তোয়াক্কা করি না।
তিনি বলেন, ক্ষমতা কোন ভোগের বিষয় নয়। ক্ষমতা হচ্ছে মানুষের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিষয়।
              শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ স্থাপনে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ কাজ করেছে। আপনারা (সাংবাদিক) কেউ আমাকে কোনো পরামর্শ দেননি। নিজ উদ্যোগে করেছি। এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম জাতির পিতার কাছ থেকে। কেননা জাতির পিতা সংবাদপত্রে কাজ করতেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক রাহাত খান, গোলাম সারোয়ার, আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমানসহ তথ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে ১৯৬ সাংবাদিক এবং সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রধানমন্ত্রী অনুদানের চেক তুলে দেন।
২০১৪ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বিল পাশ হয়। এর ভিত্তিতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার এই ট্রাস্ট গঠন করে।
              প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বিএনপি’র সন্ত্রাস ও তাদের শাসনামলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ সালের পর আপনারা দেখেছেন যে কি ঘটেছে সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের ওপর এরা আক্রমন করেছে এবং এদের চরিত্র একটুও বদলায় নাই।
এ সম্পর্কে বিএনপির নবগঠিত কমিটিকে নিয়ে সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫শ’ জনের একটা তালিকা দিয়ে তারা একটা কমিটি গঠন করেছে। যেখানে যুদ্ধপিরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত, পাক হানাদারদের সহযোগিতা করার জন্য যাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হয়েছে, তাদেরকে রেখেছে।
তিনি এ সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বঙ্গবন্ধুর প্রথম উদ্যোগ গ্রহণের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এটা বাংলার মানুষের একটা দাবি ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। জাতির পিতা সেই বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই যুদ্ধাপরাধীদেরকে মুক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধু সেই বিচারের জন্য যে অর্ডিন্যান্সনের মার্শাল ‘ল’ অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বাতিল করা হয়।
সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দিয়ে তাদের রাজনৈতিক ও সমাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল এবং যারা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল পাকিস্তানী পাসপোর্টে, সেই পাকিস্তানী পাসপোর্টেই তাদের আবার দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্বও দেয়া হয়। অথচ তারা বাংলাদেশেই বিশ্বাস করে না।