সেক্স রোবট কী মানুষের জন্য হুমকী হয়ে উঠছে?
---
বৃহৎ ব্যবসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রোবট সেক্স ডল। বিভিন্ন রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে এই সেক্স ডল বানাচ্ছেন। তাদের দাবি এই রোবটগুলো এতোটাই আসল লাগে যে অনেকেই সেটিকে বিয়েও করতে চাচ্ছেন।
রোবট সেক্স ডলগুলো বাস্তবিক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং অনেকাংশে জীবন্ত বলে দাবি করেছেন এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক পুরুষই এখন চাহিদা পূরণের জন্য এই রোবট সেক্স ডল কিনছেন।
সেক্স রোবট কী?
গাড়ি নির্মাণ, ঘর-বাড়ি পরিষ্কার থেকে শুরু করে খাবার তৈরি পর্যন্ত সব কাজই এখন রোবটের মাধ্যমে হচ্ছে। আর এবার মানুষের ব্যক্তিগত চাহিদাও পূরণ করছে রোবট।
সেক্স রোবট এক ধরণের বাস্তবধর্মী পুতুল যা মানুষের চলা-ফেরা নকল করতে পারে এবং কামনা মেটাতে পারে। রেসপন্সিবল রোবটিকস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রোফেসর নুয়েল শার্কে জানান, তিন জনে মিলে যৌনকর্মে সেক্স রোবটের ব্যবহার বেড়েছে। তাছাড়া টেলিডিলডোনিক্সেও সেক্স রোবটের ব্যবহার বেড়েছে। টেলিডিলডোনিক্স এক ধরণের তারবিহীন প্রযুক্তির যার মাধ্যমে দূরবর্তী অবস্থান থেকে সঙ্গীর সাথে যৌনকর্ম করা যায়। সেক্স রোবটে বিল্ট ইন হিটারও আছে। এই হিটার পুরুষের দেহতে উষ্ণ অনুভূতি দেয়। তাছাড়া সেক্স রোবটকে স্পর্শ করলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। কারণ রোবটটিতে সেন্সর যুক্ত থাকে। সেক্স রোবট যাতে কথা বলা, হাসা এবং গান গাইতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে সেরকম মস্তিষ্ক তৈরি করেছে এক রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে হারমোনি নামের সেক্স ডলটি পৃথিবীর প্রথম সেক্স রোবট যাতে আবেগসংক্রান্ত অনুভূতি আছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন বিশেষায়িত এই রোবট পরবর্তী দশক থেকে বাসা-বাড়িতে বিক্রি দেখা যাবে।
সামান্থা কী?
সামান্থা আধুনিক বিশ্বের হাইপার-রিয়েলিস্টিক ডল যা বাজারে সাড়া ফেলেছে। লাভ মেশিন নামে খ্যাত সামান্থার ডিজাইনার সার্গি সান্তোস বলেন, ‘অ্যান্ড্রয়েড রোবটটি এতোটাই প্রেমোদ্দীপক যে অনেক পুরুষেই এর প্রতি আবেগী হচ্ছে।’
তবে সামান্থার নির্মাতারা জানিয়েছেন, রোবটটির মুখে, হাতে, স্তনে এবং যোনীতে সম্পূর্ণরূপে সেন্সর যুক্ত করতে পারলে এটি আরও ভালোভাবে পুরুষের যৌন কামনা মেটাতে পারবে।
সেক্স রোবট সামান্থার মুখ, হাত, স্তন এবং যোনীতে সেন্সর আছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি ২০১৪ সালে সামান্থা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে। তথ্যচিত্রটির নাম দেওয়া হয় ‘রোবট কি আমাদের ভালোবাসতে পারবে?’ এই তথ্যচিত্রে মানুষের সাথে রোবটের ভালোবাসা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়।
সেক্স রোবটের দাম কত?
ব্যক্তিগত সেক্স রোবটের দাম দশ হাজার পাউন্ড। তবে এর থেকেও সস্তা সেক্স রোবট বাজারে পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রযুক্তিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় এর দাম কমে আসবে।
মানুষ কি সেক্স রোবটকে বিয়ে করছে?
বাস্তবধর্মী সেক্স রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিয়েলডলের মতে, তাদের তৈরি সেক্স ডলগুলো বহু নিঃসঙ্গ মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র জানান, সেক্স রোবটগুলোকে এখনও মানুষ যৌনসঙ্গী হিসেবেই বেশি ব্যবহার করছে। তবে আমাদের এমন অনেক ক্রেতা আছেন যারা এটিকে বিয়ে করছেন। তারা জানিয়েছেন এসব সেক্স রোবট তাদের জীবন বাঁচিয়েছে, কেননা সঙ্গী মারা যাওয়ার পর বা কোন সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে সেক্স রোবটই তাদের বেঁচে থাকা অনুপ্রেরণা জোগায়।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
কিছু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সেক্স রোবট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক প্রণয়ে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। ফিউচারলজিস্ট ডক্টর আয়ান পিয়ারসন বিশ্বাস করেন, রোবটের কারণে নারীরা পুরুষদের বয়কট করতে পারে। এমনকি তারা মেশিনের প্রেমেও পড়তে পারে। তিনি মনে করেন ২০৫০ সাল নাগাদ রোবট সেক্স নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারে।
‘লাভ এ্যান্ড সেক্স উইথ রোবটস’ গ্রন্থের লেখক লেভি বলেন, ‘অনেকেই ব্যাপারটিকে আমলে নেবেন না এটা আমি জানি। তবে যৌন কর্মের দায়িত্ব নেওয়া রোবটগুলো জনপ্রিয় হলে সমাজে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। ইন্টারনেট, মোবাইল ডিভাইস এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মনুষ্য সম্পর্কে বড় ধরণের পরিবর্তন দেখছি আমরা। আর পরবর্তী প্রযুক্তি মেশিনের সাথে প্রণয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে দিবে। নারী অথবা পুরুষ সঙ্গী ছেড়ে মানুষ রোবটের সাথে যৌনকর্ম করা শুরু করবে। অনেকে আবার বিয়েও করবে।’
যৌনবিশেষজ্ঞ লেভ শেগলোভের মতে, রোবট সেক্স মনুষ্য সমাজে বিপদ ডেকে আনবে। তিনি রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, রোবটের সাথে যৌনকর্ম করাটা এক ধরণের প্রতারণামূলক কাজ। এটি মানসিক রোগ এবং বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে দিবে। একজন সত্যিকারের মনুষ্য সঙ্গী যে অনুভূতি বা ভালোবাস দিতে পারবে তা একটা রোবট কখনো দিতে পারবে না।’
তাছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সেক্স রোবট ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের পরিমাণ বাড়াবে।
সেক্স ডল হারমোনি কথা বলতে পারে এবং তার পুরুষ সঙ্গীর তথ্যাদি মনে রাখতে পারে।
রোবট সেক্স ডলের জন্য কি পতিতালয় থাকবে?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যৌন সংক্রান্ত রোগ সংক্রমণ এবং মানব পাচার প্রতিরোধে সেক্স ডল পতিতালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে ২০৫০ সাল নাগাদ এ ধরণের পতিতালয় তৈরি হবে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এর ফলে যৌনকর্মীদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে বলেও প্রশ্ন উঠেছে।
তবে শুধুমাত্র সেক্স ডল নিয়ে স্পেনের বার্সেলোনায় ইতোমধ্যে একটি পতিতালয় চালু হয়েছে।
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট