g ছোঁয়াচে রোগাক্রান্ত রোহিঙ্গারা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে স্থানীয়রা | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

রবিবার, ১লা অক্টোবর, ২০১৭ ইং ১৬ই আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ছোঁয়াচে রোগাক্রান্ত রোহিঙ্গারা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে স্থানীয়রা

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
news-image

---

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক রোগ। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয় জনগণ। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এতো দ্রুত তাদের বাসস্থল স্বাস্থ্যসম্মত করে গড়ে তোলা দুরূহ। এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জন্য সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত করা সম্ভব না হওয়ায় রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় জনগণ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দিনযাপন করছেন।

অপরদিকে প্রতিদিনই শত শত আহত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে স্থানীয়দের মাঝে এ ধরণের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী জানালেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ দেশে নতুন কিছু না। আগেও আসতো, এখনো আসছে। এবার সংখ্যাটা অতিরিক্ত। সংক্রামক ব্যাধি যেন না ছড়ায়, সে বিষয়ে আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেহেতু এবার বেশি রোহিঙ্গা আসছে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য। আশা করি, এটা আমরা সমাধান করতে পারবো।’

স্থানীয়দের চিন্তার কিছু নেই বলেও একটি অনলাইন গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কক্সবাজারের সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন রোগ নিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবা দিলে দ্রুত সংক্রামক রোগগুলো ছড়িয়ে যেতে পারে। সংক্রামক রোগ ছড়ানো রোধ করতে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা ভাবে হাসপাতাল দরকার। আলাদা হাসপাতাল করলে জেলার সরকারি স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ হবে না। বর্তমানে স্থানীয়দের জন্য হাসপাতালের যে শয্যা ছিল অনেক শয্যাই মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য দিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবায় মারাত্বক প্রভাব বিস্তার করছে।

স্থানীয়দের মতে, অপুষ্টি ও নিউমোনিয়ার প্রকোপের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সহজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোহিঙ্গার এইচআইভি পজেটিভ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর এই হাসপাতালেই মারা যান ৫০ বছরের এইচআইভি আক্রান্ত ওই রোহিঙ্গা নারী।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জানায়, রাখাইন রাজ্য মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র একটি রাজ্য এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যাপক অপ্রতুলতা রয়েছে। গত বছরও প্রায় ৮০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী আসলেও এবার এতো অল্প সময়ের মধ্যে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এসে পড়ায় ঠিক কি ধরনের স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে তা নির্ণয় করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশেপাশের এলাকায় পানিবাহিত সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্যসেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে শরণার্থী শিশুদের মধ্যে হাম ধরা পড়েছে এবং অন্তত দুইজন শরণার্থী এইচআইভি আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুস সালাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ডায়রিয়া, জন্ডিস এবং হামের বাইরে প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে তারা দুইজন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী পেয়েছেন।’

তিনি জানান, ‘মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে আসছেন তাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধি থাকতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের এসব ছোঁয়াচে রোগ হতে পারে। এতে রোহিঙ্গা শিশুদের থেকে সংক্রামক রোগ বাংলাদেশের স্থানীয়দের মাঝে ছড়াতে পারে।’

সিভিল সার্জন আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে এবং স্থানীয়দের মাঝে যাতে সংক্রামক রোগ ছড়াতে না পারে সে জন্য বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। এতে ইউনিসেফ সহযোগিতা করছে বলে তিনি জানান।’

তাঁর মতে, পানিবাহিত যে রোগ রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে নিয়ে এসেছেন তাতে স্থানীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে। যদিও রোগগুলো ছড়িয়ে না পড়ার সেই ব্যবস্থাটা হাতে নেয়া হয়েছে। যেমন খোসপাঁচড়া, আমাশয়, এইচআইভি পজেটিভ, হাম, জন্ডিস, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এ ধরনের রোগ নিয়ে জেলার স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নেয়ার ফলে সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে।

সিভিল সার্জন ডা. সালাম জানান, মিয়ানমারের সহিংসতায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে এই পর্যন্ত ৬ মাস থেকে ১৫ বছরের ৮০ হাজার শিশুকে হাম রুবেলা (এমআর) টিকা খাওয়ানো হয়েছে। ৫ বছরের শিশুদের মধ্যে ৪৫ হাজার পোলিও টিকা, ৪৩ হাজার শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী কক্সবাজার আসার পর রোহিঙ্গা রোগিদের একত্রিত করতে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সীমান্তের দুই উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে ৩০টিরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার কথাও রয়েছে। এই ক্লিনিকগুলো চালু হলে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ কমবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত জেলার সর্বোচ্চ এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

এ জাতীয় আরও খবর