স্পোর্টস ডেস্ক : এবারের বিপিএলে রান উঠছিল কম। দলগত রানই হচ্ছিল ১২৪, ১২৭, ১৩০, ১৩৩। সেখানে ১২২ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস মিরপুরে রবিবার খেলে ফেললেন সাব্বির রহমান। রাজশাহী কিংসের ব্যাটসম্যান ৬১ বলের ইতিহাস গড়া ইনিংসটায় বড় রান তাড়া করে জয়ের পথে নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হতাশায় ডুবেছেন সাব্বির। জেতাতে পারেননি দলকে।
বোলারদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠা মিরপুরে মুশফিকুর রহীম এবং শাহরিয়ার নাফীস করেছেন দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরি। তাতে ৪ উইকেটে ১৯২ রান তোলে বরিশাল। জবাবে রাজশাহীর ড্যাশিং ব্যাটসম্যান সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। কিন্তু চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ৪ রানের দারুণ এক জয় তুলে নিল মুশফিকের বরিশাল! শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৯ রান তুলতে পারেনি রাজশাহী। ৬ উইকেটে ১৮৮ রানে থেমেছে তারা।
বরিশাল করেছিল এবারের আসরের সর্বোচ্চ দলগত স্কোর। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপদে পড়ে মুশফিকের দল। ২১ রানের মধ্যে ফিরে যান দুই ওপেনার। এরপর দেখা গেল ব্যাটিং ঝলক। বিপিএলের চতুর্থ আসরে প্রথমবারের মত শতাধিক রানের পার্টনারশিপ দেখা গেলে হোম অব ক্রিকেটে!
বেলা দুইটায় শুরু হওয়া ম্যাচে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই উমর আকমলের হাতে ধরা পড়েন ওপেনার দিলশান মুনাবীরা (০) । বোলার ফরহাদ রেজা। এরপর ক্রিজে আসেন শাহরিয়ার নাফিস। জুটি জমে না উঠতেই আবারও ফরহাদ রেজার আঘাত। তার দ্বিতীয় শিকার হয়ে নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দেন আরেক ওপেনার ডেভিড মালান (১৩)। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বরিশাল বুলস।
মালানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মুশফিক। হাত খুলে মারতে শুরু করেন দুজনেই। প্রথমে ধীরে খেললেও হাফসেঞ্চুরির দৌড়ে এগিয়ে যান শাহরিয়ার নাফীস। ৩৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পুরণ করার পর ৪৪ বলে ৬৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ড্যারেন স্যামির বলে নুরুল হাসানের হাতে ধরা পড়েন। ইনিংসটিতে তিনি ৪টি চার এবং ৪টি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
নাফিসের বিদায়ের পর মুশফিকের সঙ্গী হন থিসারা পেরেরা। মুশফিক তখন ৪৮ রানে অপরাজিত। অতঃপর ধীরে ধীরেই হাফসেঞ্চুরি পুরণ করলেন বরিশাল অধিনায়ক। ৪০ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পথে তিনি ৩টি চার এবং ২টি ছক্কা হাঁকান। হাফসেঞ্চুরির পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন মুশফিক। আরও ১টি চার এবং ২টি ছক্কা যুক্ত হয় তার ইনিংসে। শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে ৮১ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন মুশফিক। শেষ বলে পেরেরা (১১) রানআউট হয়েছেন। কিন্তু দল রানের পাহাড়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, নিজেদের প্রথম ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন এই দুজন। তবে দলকে জেতাতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৫০ এবং পরের ম্যাচে ৩৩ রান করেন বরিশাল অধিনায়ক।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১ রানেই ওপেনার রকিবুল হাসানকে হারায় রাজশাহী। তবে অপর ওপেনার মমিনুল হক সাব্বির রহমানকে নিয়ে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং শুরু করেন। ১৪ রান করার পর সাব্বির একবার জীবন পান। আল-আমিন ক্যাচ ছাড়েন। শেষে ওই আল-আমিনই সাব্বিরকে আউট করে জয়ের পথ থেকে সরিয়েছেন রাজশাহীকে। ব্যক্তিগত ১২ রানে আল-আমিনের বলে থিসারা পেরেরার হাতে ধরা পড়েন মমিনুল। এর আগে জুটিতে আসে ৪৮ রান। পরের বলেই উমর আকমল ফিরে গেলে একটি ছোট্ট ধসের মুখে পড়ে রাজশাহী।
ধস সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ড্যাশিং ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান এবং সামিত প্যাটেল। শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন সাব্বির। ২৬ বলে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। ৫০ রানে পৌঁছতে তিনি ৩ চার এবং ৪টি ছক্কা হাঁকান। এরপর থেমে থাকেননি টি-২০ স্পেশালিস্ট। ৫৩ বলে তিন অংকের ম্যাজিক পৌঁছান তিনি। বিপিএলের চতুর্থ আসরের প্রথম সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাট থেকে। বিপিএলে বাংলাদেশি হিসেবে এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি। তবে দেশিদের মধ্যে দ্রুততম। সেঞ্চুরি করতে সাব্বির ৮টি ছক্কা ও ৬টি বাউন্ডারি হাঁকান। তার আগেই অবশ্য ফিরে গেছেন সামিত প্যাটেল (১৫)। সাব্বিরের সঙ্গী হন অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি।
শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ১২২ রান করে থামেন সাব্বির। সমান ৯টি করে চার-ছক্কায়। আল-আমিন হোসেনের বলে ডেভিড মালানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তখন জিততে ২৪ বলে ৩৪ রান লাগে রাজশাহীর। আসেন নুরুল হাসান। জয় থেকে মাত্র ১০ রান দূরে থাকতে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্যামি। ১৮ বলে ৩ চারে ২৭ রান করে তিনি এমরিটের বলে বোল্ড হয়ে যান।
তখনই মূলতঃ শেষ হয়ে যায় রাজশাহীর আশা। শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল। টি-টোয়েন্টির হিসেবে এটা অসম্ভব কোনো রান নয়। কিন্তু নুরুল হাসান এবং আবুল হাসান মিলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। ফলে ৪ রানের অসাধারণ এক জয় তুলে নেয় বরিশাল। শেষ ওভারের হিরো হয়ে যান বোলার থিসারা পেরেরা! তার কাছে থেক ৪ রানের বেশি আদায় করতে পারেননি রাজশাহী কিংসের ব্যাটসম্যানরা। হারা দলে থাকলেও সাব্বির হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।