স্পোর্টস ডেস্ক :দু’জনের বয়সের ব্যবধান দু’বছর। দু’বছরের বড় হয়েও ২০১৪তে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মুস্তাফিজুর খেলেছেন মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে। দু’জনেই একসঙ্গে খেলেছেন খুলনা বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। ১৯ পেরুনোর আগে মুস্তাফিজুরের হয়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। ১৯তম জন্মদিন উদ্যাপনের আগেই মিরাজের হয়ে গিয়েছে টেস্ট অভিষেক। কাকতালীয় হলেও সত্যি, কেরিয়ারের শুরুতেই বিরল রেকর্ডে এক জন আর এক জনকে ছুঁয়ে ফেলেছেন! ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্রিকেট কেরিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করে অন্য উচ্চতায় নিজেকে উঠিয়ে এনেছিলেন বাঁ হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর। ১৬ মাস আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে পঞ্চাশ রানে পাঁচ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে আরও ভয়ঙ্কর (৬/৪৩) মুস্তাফিজুরকে দেখেছে বিশ্ব। ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রথম দুই ম্যাচে এমন কৃতিত্বে জিম্বাবোয়ের ব্রায়ান ভিটরির রেকর্ড ছুঁয়েছেন মুস্তাফিজ।
কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুরের সেই কৃতিত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে তারই এক সময়ের সঙ্গী মেহেদ্ হাসান মিরাজ টেস্ট কেরিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে স্বপ্ন ছাড়িয়ে যাওয়া বোলিং উপহার দিয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে রং ছড়িয়েছিলেন অভিষেক ইনিংসেই (৬/৮০), ফিরতি টেস্টে সেই মিরাজেই আলোকিত ঢাকা। শনিবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ওকসকে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেই টেস্ট অভিষেক ইনিংসের মতো দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ৮২ রানে ছয় উইকেট মিরাজের।
চট্টগ্রাম টেস্টে মিরাজের বোলিংয়ে (৬/৮০) প্রথম বারের মতো তিনশোর নীচে (২৯৩/১০) ইংল্যান্ডকে অল আউট করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ঢাকা টেস্টে সেখানে আড়াইশোর নীচে (২৪৪/১০) ইংল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে ফেলার নায়কও অফ স্পিনার মিরাজ! টেস্ট অভিষেকে পাঁচ উইকেটের ইনিংসে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মিরাজের আগে নাম লিখিয়েছেন ৬ বোলার। তবে তাদের কেউ কেরিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে কোনও ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পাননি। টেস্ট অভিষেকে স্মরণীয় বোলিংয়ে নিজের জাত জানিয়ে দেয়া মিরাজ উপর্যুপরি দ্বিতীয় টেস্টে পাঁচ উইকেটের ইনিংসে (৬/৮২) নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। ঢাকা টেস্টে নতুন বলে প্রথম স্পেলটি তার ১১-১-৪৪-৩, উইকেটে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডকে লিড এনে দেয়া নবম জুটিকে ৯৯-এ থামিয়ে দিতে পেরেছে মুশফিকুরের দল। দ্বিতীয় নুতন বলটি মিরাজের হাতে তুলে দিয়েই!
তামিমের সেঞ্চুরি (১০৪), দ্বিতীয় জুটিতে তামিম-মুমিনুলের ১৭০-এর পরেও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের পুঁজি মাত্র ২২০। তার পরেও এই পুঁজি নিয়ে ইংল্যান্ডের লিডটা বড় হতে দেননি মিরাজ। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের লিড মাত্র ২৪ রানের। মিরাজময় দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ ১৫২/৩-এ। এগিয়ে আছে ১২৮ রানে। ইমরুল কায়েস ৫৯ রানে। দ্বিতীয় দিনের শেষ বলে সুইপ শটে নিজের উইকেট খুইয়ে মাহামুদুল্লাহ হাফ সেঞ্চুরি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছেন (৪৭)।
চতুর্থ ইনিংসের পরীক্ষায় ইংল্যান্ডকে ছিন্নভিন্ন করার স্বপ্ন এখন বাংলাদেশে আবর্তিত হচ্ছে মিরাজকে ঘিরেই। অথচ, প্রথম দুই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ছয়টি করে উইকেট নিয়েও, বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ইতিহাস রচনা করেও আত্মহারা নন মিরাজ। বললেন, ‘সব সময় চেষ্টা করি দলের জন্য যেন গড়পড়তা পারফর্ম করতে পারি। অ্যাভারেজ পারফর্ম করতে এসে দু’টেস্টে ৬টি করে উইকেট পেলাম।’
পুরনো বলে সাধারণত টার্ন এবং স্পিন পাওয়ার কথা স্পিনারদের। সেখানে ১৯ বছরে পা দেয়া ছেলেটি নাকি চকচকে নতুন বল হাতে নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ অনুভব করেন। তাঁর কথায়, ‘বলটা নতুন থাকলে বেশি ভাল লাগে। যখন নতুন থাকে তখন বল নিয়ে বেশি কাজ করা যায়। বল পুরনো হয়ে গেলে অনেক নরম হয়ে যায়, তখন সাইন না থাকায় কাজটা অনেক কমে যায়। নতুন বলে আমি আত্মবিশ্বাস একটু বেশি পাই।’
টেস্ট অভিষেকে স্মরণীয় পারফর্ম করেছেন। খুলনা থেকে দূরত্ব অনেক বলে বাবা মা’কে চট্টগ্রামে আসতে বারণ করেছেন মিরাজ। চট্টগ্রামে মেহেদি রং ছড়ানো টেস্টে তাঁর পারফরমেন্সে মুগ্ধ মেহেদির বাবা-মা ঢাকা টেস্ট দেখতে ছেলের কাছে বায়না ধরবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুলনা থেকে কষ্ট করে বাবা-মা আসুন, তা চাননি মিরাজ। বাবা-মা আসেননি, তাতেও কষ্ট নেই। তবে যাঁর হাতে তালিম পেয়ে আজ এত দূর আসা, ছেলেবেলার সেই ক্রিকেট গুরু আল মাহামুদ স্যারকে তো মাঠ থেকেই দেখতে পাচ্ছেন। চোখটা তাই দু’চার বার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখা সেই তাঁর দিকেও গিয়েছে মিরাজের।