স্টাফ রিপোর্টার সরাইল : চরম অনিয়ম দূর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগের সত্যতা আঁচ করতে পেরে সরাইলে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা। স্বচ্ছল বিত্তশালী পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরাও এ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ওজনে কম দেওয়ারও। এ ছাড়া ২/১টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানই কৌশলে হয়ে বসেছেন ডিলার। রয়েছে ভূয়া কার্ডের ছড়াছড়ি। একেকজন জনপ্রতিনিধির হাতে মুঠোয় রয়েছে ২০-৩০টি কার্ড। এক আঙ্গুলের টিপসহিতেই কমপ্লিট হচ্ছে মাষ্টাররোল। ইচ্ছেমত কালো বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সরকারের ফেয়ার প্রাইজের চাল। গরীবরা আঙ্গুল চুষছে। আর দূর্নীতি করে বড় লোক হচ্ছে বিত্তশালীরা। এসব কারনে ২৯ সেপ্টেম্বর ইউএনও উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই চাল বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেন। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট টেক অফিসারদের সকল সুবিধা ভোগীর কার্ড সংগ্রহ করতে বলেন। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে জনৈক চেয়ারম্যান নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরেই টেক অফিসারকে হুমকি ধমকি মারধরের চেষ্টা করেন। নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর, খাদ্য অফিস ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় সারা দেশের ন্যায় সরাইলেও গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ১০ টাকা কেজি দামে চাল বিক্রি। ৯টি ইউনিয়নে মোট বরাদ্ধ হচ্ছে ২৪৯.৬০০ মেট্রিক টন চাল। প্রথম ধাপে সেপ্টেম্বর মাসে ডিলাররা উত্তোলন করেছে ২২৭.৮৮০ মেট্রিক টন। দরিদ্র অস্বচ্ছল ও নিম্ন আয়ের লোকজনই হবেন এ চালের ক্রেতা। এ লক্ষ্যে সরাইলের ৯টি ইউনিয়নে ১৮ জন ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ডিলার নিয়োগেও করা হয়েছে কারসাজি। ২/১টি ইউনিয়নে শুধুমাত্র কাগজে কলমে কৌশলে নিজেদের আস্থাভাজন যুবকদের ডিলার নিয়োগ দিয়ে চাল বিক্রি করছেন চেয়ারম্যান নিজেই। গরীবের চাল বিক্রিতে শুরু হয়ে যায় দূর্নীতি। সর্বত্র রয়েছে ভূয়া কার্ডের ছড়াছড়ি। নামে বেনামে কিছু জনপ্রতিনিধির দখলে রয়েছে কার্ড। কিছু জায়গায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম এ তালিকায় থাকার অভিযোগ রয়েছে ভুড়িভুড়ি। চাল উত্তোলন করে জায়গায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেন ২৫ টাকা কেজি। এ ছাড়া পূর্বের তৈরী কার্ড গুলোতে আপত্তি দিচ্ছেন বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা। ভূক্তভোগী নয় ডিলার বা তাঁর পছন্দের লোক দিয়ে ইচ্ছেমত টিপসহি মেরে রেজিষ্টার ও মাষ্টাররোল ফিলআপ করছেন তারা। কাল বাজারে গায়েব হয়ে যাচ্ছে গরীবের চাল। অনেক ডিলার খাদ্য গুদাম থেকে চাল বাহির করে দ্রুত চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন অন্যত্র। গণমাধ্যম কর্মীরা তালিকা দেখতে চাইলে বেঁকে বসেন জনপ্রতিনিধিরা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বিজয়নগরের সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের খিরাতলা এলাকায় ২৬০ বস্তা সরকারি চালসহ একটি ট্রাক আটক করে টহল পুলিশ। সেইখানে বস্তার গায়ে সরাইল লেখা বেশকিছু বস্তা ছিল। শাহজাদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন নিজেই ভিজিডি’র চাল ৩০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তার ডিলার মোঃ আফজাল খা’র বিরুদ্ধে। ডিলার অভিযোগের দায় স্বীকার করে ক্ষমাও চেয়েছেন। অনিয়মে বাঁধা দেওয়ায় চেয়ারম্যান ও টেক অফিসারদের মধ্যে বাড়ছে দ্বন্ধ। এসব কারনে ইউএনও ও উপজেলা খাদ্য কমিটির সভাপতি দ্বিতীয় দফা চাল উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার লক্ষ্যে গত ১৭ অক্টোবর সহকারি কমিশনার (ভূমি) মৌসুমি বাইন হিরার সভাপতিত্বে ইউএনও’র কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট টেক অফিসারদের নিয়ে একটি সভা হয়। সভায় চাল বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। শেষের দিকে চাল উত্তোলন ও তালিকা নিয়ে চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মিয়া ও টেক অফিসার বিআরডিবি কর্মকর্তা মোঃ হাসিনুর রশিদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান হুমকি ধমকি দিয়ে হাসিনুর রশিদকে মারধর করার চেষ্টা করেন। হাসিনুর রশিদ বলেন, চুন্টার ডিলার মোঃ ঈমান উদ্দিনের কোন দোকান নেই। তাকে কিভাবে ডিলার নিয়োগ দিল জানি না। তার কাজ চেয়ারম্যানই দেখা শুনা করেন। আমার মনে হয় চেয়ারম্যান নিজেই ডিলার। অনিয়ম দূর্নীতির সুযোগ দিচ্ছি না। তাই চেয়ারম্যান আমাকে মেনে নিতে পারছেন না। তিনি আমাকে সরানোর চেষ্টা করছেন। তাই যে কথাই বলি তিনি আমার উপর চটে যান। চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মিয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে ডিলার নিয়োগ হয়েছে ২০১১ সালে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর গরীবের তালিকায় রয়েছে বিত্তশালীদের নাম। ক্রুটিপূর্ণ তালিকা নিয়েই হাসিনুর রশিদের সাথে সেইদিন আমার বাকবিতন্ডা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন ও গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন ভূইয়া বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশে আপাতত ডিলারদের চাল উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তিনি সকল কার্ড উত্তোলন করে উনার কাছে জমা দিতে বলেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির তথ্য জেনে চাল বিক্রি বন্ধ রেখেছি। আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে সকল কার্ড জমা দিতে বলেছি। তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন করব।